রাজবাড়ীতে এক তরুণী অটো যাত্রীকে (২৩) গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণের চেষ্টা করেছে তিন বখাটে অটো চালক। ঘটনার একদিন পরে ৩ জনকেই আটক করেছে র্যাব।
আটকৃতরা হলো, রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের আরশাদ মোল্লার ছেলে মামুন মোল্লা (২০), বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের মৃত মুন্নাফ সরদারের ছেলে হান্নান সরদার (৩০) ও মৃত আবুল মোল্লার ছেলে রানা মোল্লা (২৫)। আটককৃত তিনজনই প্রাথমিকভাবে র্যাবের কাছে তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে জেলা সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার দুপুরে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন অটো চালককে আটক করে র্যাবের হাতে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা।
ভূক্তভোগী তরুণীর বাড়ি সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলায়। সে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় একটি কুরিয়ার কোম্পানিতে চাকরি করে বলে জানিয়েছেন।
তরুণী জানান, ‘আমি মাদারীপুরে এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে গাবতলী থেকে ফরিদপুরের বাসে উঠি। পাটুরিয়া ঘাটে এসে যানজট দেখে আমি লঞ্চে পদ্মানদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসি। সেখান থেকে মাহেন্দ্র গাড়িতে করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোয়ালন্দ মোড় পৌঁছাই। ওই সময় আমি চিন্তা করি যেহেতু রাত হয়ে গেছে তাই এখন মাদারীপুরে না গিয়ে ফরিদপুরের মুন্সিবাজারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকবো। গোয়ালন্দ মোড়ে আমি ফরিদপুরের গাড়ি খুঁজতে থাকলে এক অটোচালক আমাকে বলেন তার অটোতে শিবরামপুর গেলে আমি ফরিদপুরের গাড়ি পাবো। ওইসময় আমি ওই অটোতে উঠি। তখন অটোচালকের পাশে আরও একটি ছেলে বসা ছিলো। অটোটি ছেড়ে বেশকিছু দূর আসার পর অটোতে আরও একটি ছেলে উঠে। এরপর একটি নির্জন জায়গায় অটোটি নিয়ে দাড় করিয়ে চালকসহ তিনজন আমাকে অটো থেকে নামতে বলে এবং মোবাইলসহ ব্যাগপত্র কেড়ে নিয়ে যায়। তখন আমি পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে চিৎকার দিতে গেলে তারা আমাকে মুখ চেপে ধরে রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর অটোচালক অটো নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে এবং বাকী দু’জন আমাকে গলায় মাফলার পেচিয়ে ভয় দেখিয়ে জঙ্গলের মধ্যে জোড়পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এরপর আমি তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে তাদের পেটে লাথি মেরে দৌঁড়ে পালিয়ে বাঁচি।
মেয়েটির আশ্রয়দাতা মালিক ছাকেন বলেন, রাত প্রায় ১০টার দিকে মেয়েটি আমাদের বাড়িতে এসে চিৎকার দিয়ে পরে। এরপর আমরা পুলিশকে খবর দিই।
খানাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রাতে ওই তরুণীকে ছাকেনের বাড়িতেই রাখা হয়। সকালে তিনি তার পরিবারের কাছে চলে গিয়েছে। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।
আটককৃত অটোচালক রানা মোল্লা বলেন, আমার অটোতে ওই মেয়ে গোয়ালন্দ মোড় থেকে শিবরামপুর যাচ্ছিলো। ওইসময় আমার সঙ্গে মামুন ছিলো। আর মাঝপথ থেকে হান্নান অটোতে উঠে। পথে মজলিশপুর এলাকার নিহাজ জুট মিলের সামনে নির্জন জায়গায় নিয়ে হান্নান ও মামুন ওই মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ চেষ্টা করে। কিন্তু আমি অটো নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
র্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের দুই নম্বর কোম্পানির অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রইছ উদ্দিন জানান, আটকরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। ওই তরুণীকে এনে আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের রাজবাড়ী সদর থানায় হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, বসন্তপুর ইউনিয়নে সম্প্রতি অপরাধ প্রবণতা আশংকাজনক হারে বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ওই ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য লিটনের মেহগনি বাগান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় (২৫) এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
মন্তব্যসমূহ