ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে অতিরিক্ত ও এলোপাতাড়ি আঘাতেই রায়হান আহমদের মৃত্যু হয়েছে। কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয়বার করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন তথ্য। গত ১১ অক্টোবর ভোররাতে সিলেট বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যুবক রায়হানকে ধরে এনে টাকার জন্য নির্যাতন করা হয়। সকালে হাসপাতালে নেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে মারা যান তিনি।
এ নিয়ে সমালোচনা ও নিহতের পরিবারের মামলার পর আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এক কনস্টেবলকে। তবে পালিয়ে গেছেন মূল অভিযুক্ত ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর।
নিহত রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
গত ১৫ অক্টোবর সকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ, মেজবাহ উদ্দিন, পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম, স্থানীয় কাউন্সিলর মখলেছুর রহমান কামরানের উপস্থিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েতি গোরস্থান থেকে রায়হানের মরদেহ উত্তোলন করে ফের ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিওমেক) ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম জানান, প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের সামঞ্জস্যতা রয়েছে। ভোঁতা অস্ত্রের অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর পর প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবর পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করে ফরেনসিক বিভাগ। একইদিন রায়হানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে ফরেনসিক বিভাগ, যার প্রতিবেদন আজ পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হলো।
পিবিআইয়ের কাছে রায়হানের পরিবার :
বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হানের পরিবারের সদস্য ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মখলিসুর রহমান কামরান পিবিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। আজ সাক্ষাৎকালে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এস এম খায়রুজ্জামান তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, অতি স্বত্বর তাদেরকে ভালো সংবাদ দিতে পারবেন।
সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল তার পরিবার। গত রোববার দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এসআই আকবরসহ অভিযুক্ত সকলকে গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন রায়হানের মা সালমা বেগম।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। পরিবার দাবি করে, সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে ওইদন ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পিবিআই।
dainikamadershomoy
মন্তব্যসমূহ