গত বৃহস্পতিবার মার্কিন বিমান হামলায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ‘আল কুদস’ ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার ঘটনায় ‘ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এরপর পবিত্র মসজিদের চূড়ায় যুদ্ধের লাল ঝাণ্ডাও উড়িয়েছে দেশটি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছে।
যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধে কতটা সক্ষম ইরান? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৪তম। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অবস্থান খুবই শক্ত। তাই সামরিক শক্তিতে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রকে একহাত নেয়ার ক্ষমতা আছে ইরানের।
তবে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় ইরান নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পর বিশ্বের চতুর্থ শক্তি বলে দাবি করছে।
ইরানিয়ান বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) কলেজের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা জেনারেল নুরুল্লাহি গত মাসে বলেছেন, ইরান প্রতিদিন ২০ হাজার মিসাইল উৎক্ষেপণে সক্ষম। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ২১টি মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র তাক করা আছে।
তিনি আরো বলেন, ইরানের সক্ষমতা আসলে আরও অনেক বেশি। যুদ্ধ বেধে গেলে দৈনিক এর চেয়েও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম আমরা। সবচেয়ে বড় শত্রুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের জন্য ইরান প্রস্তুত।
আসুন একনজরে দেখে নেয়া যাক ইরানের সামরিক শক্তি-
সেনাবাহিনী:
ইরানের বর্তমানে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য রয়েছে। সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কমপক্ষে দেড় লাখ ইসলামিক রিভলিউশানারি গার্ড কর্পস বা আইআরজিসি সেনা মজুদ আছে ইরানের। আইআরজিসি ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক ফোর্স বলে ধরা হয়।
দেশটির সেনাবাহিনীতে ট্যাংক সংখ্যা এক হাজার ৬৩৪। সাঁজোয়া যানের সংখ্যা দুই হাজার ৩৪৫।
সেনাসদস্যের ব্যবহারের জন্য কামান রয়েছে দুই হাজার ১২৮টি। পাশাপাশি ৫৭০টি সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি (সংক্রিয় কামান) এবং এক হাজার ৯০০টি রকেটচালিত কামান রয়েছে।
এছাড়া দেশটির সামরিক প্রশিক্ষিত জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৬ লাখ ১৯ হাজা ২১৫ জন।
বিমানবাহিনী:
ইরানের বিমানবাহিনীতে ৫০৯টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে - ফাইটার বিমান ১৪২টি, অ্যাটাক বিমান ১৬৫টি, হেলিকপ্টার ১২৬টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১২টি।
পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ১০৪টি ও পরিবহনের জন্য ৯৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে তাদের। তবে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোনো স্টেলথ ফাইটার বিমান নেই তাদের।
নৌবাহিনী:
ইরানের নৌবাহিনীতে কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নেই। তাদের ফ্রিগেট রয়েছে ছয়টি, করভেট রয়েছে তিনটি এবং ৩৪টির মতো সাবমেরিন রয়েছে। ইরানের ৮৮টি পেট্রোলবোট ও তিনটি মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে। এই বাহিনীতে কোনো ডেস্ট্রয়ার নেই।
পারমাণবিক শক্তি:
এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত পিছিয়ে রয়েছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তি রাষ্ট্র নয় ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৭ হাজার ২০০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে। এদিকে ইসরাইলের রয়েছে ২০০টি।
দেশের বাইরে সফল অভিযান:
ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাহিনী বলা হয় বিপ্লবী গার্ডসকে। এ বাহিনীর বিদেশি অভিযানের দায়িত্বে রয়েছে আল-কুদস ফোর্স, যার প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
মূলত আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ছাড়া আর কাছে জবাবদিতি করতে হয় না কুদস ফোর্সকে। বিদ্রোহীদের হাত থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে সুরক্ষায় সেখানে এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
এছাড়া ইরাকে শিয়া নিয়ন্ত্রিত আধা সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করে আসছে কুদস ফোর্স। জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে ইরাকের এসব বাহিনী।
ইরানের প্রতিরক্ষা খাতে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে, তা সৌদির আরবের মোট সামরিক আমদানির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মাত্র।
ইরানিরা সামরিক খাতে বেশি আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। এরপরে তাদের আমদানির তালিকায় দ্বিতীয় রয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড়। বিশেষ করে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র:
ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় বিশেষ করে স্বল্প পাল্লা আর মাঝারি পাল্লার। এসব ক্ষেপনাস্ত্র অনেক ক্ষেত্রেই সৌদি আরব ও উপসাগরীয় এলাকার অনেক ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে সক্ষম।
গেলে কয়েক বছর ধরেই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে ইরান -এমন দাবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের।
ড্রোন সক্ষমতা:
কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান তার ড্রোন সক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়েছে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ২০১৬ সাল থেকেই ইরাকে ড্রোন ব্যবহার করে ইরান। ২০১৯ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোনকে ভূপাতিত করে ইরান। মিত্রদের কাছে ড্রোন প্রযুক্তি স্থানান্তর বা বিক্রিও করেছে ইরান।
২০১৯ সালেই ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত হেনেছিলো সৌদি তেল ক্ষেত্রে। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র এজন্য ইরানকেই দায়ী করেছিল। যদিও তেহরান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।
সূত্র: বিবিসি
মন্তব্যসমূহ