ভারতের কলকাতা শহরে তিন বছরের এক শিশু-কন্যাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।
উত্তর কলকাতার মানিকতলা থানা এলাকায় একটি দাঁড় করিয়ে রাখা বাসের মধ্যে সোমবার বিকেলে শিশুটির উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ।
শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, এবং নিগ্রহের অভিযোগে মুহম্মদ সফি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই বাসটির খালাসী বলে পুলিশ জানিয়েছে। আটক করা হয়েছে বাসটিও।
সোমবার বিকেলে দাদার সঙ্গে খেলা করার সময়ে ওই শিশু-কন্যাটি বল কুড়িয়ে আনতে যায় দাঁড় করিয়ে রাখা বাসের কাছে। তখনই অভিযুক্ত মুহম্মদ সফি ওই শিশু-কন্যাটিকে ভুলিয়ে বাসের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
তার বড় ভাই বাসের দরজায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাক্কা দেয়, বোনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কান্নাকাটিও করতে থাকে। ব্যর্থ হয়ে সে নিজের মা-কে ডেকে নিয়ে আসে।
স্থানীয় মানুষরা সেখানে জড়ো হয়ে বাসের দরজা ভেঙে ফেলতেই দেখতে পান যে বাসের ভেতরের একটি সিটের ওপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ওই শিশু-কন্যাটি।
বাসের খালাসীর হাতে আর পোষাকেও রক্তের দাগ দেখা যায়। পুলিশে খবর দেওয়া হলেও তারা এসে পৌঁছানোর আগেই ওই খালাসীকে মারধর করতে শুরু করে স্থানীয়রা।
শিশুটিকে প্রথমে একটি স্থানীয় নার্সিং হোমে, পরে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ বলছে, ওই খালাসীর বিরুদ্ধে শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতন-রোধী 'পক্সো' আইনে মামলা করা হয়েছে। ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য আটক করা হয়েছে বাসটিও।
স্থানীয়রা বলছেন, যে এলাকায় ওই যৌন নিগ্রহ চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ, সেটি মোটেই নির্জন এলাকা নয়। আর বিকেল চারটের দিকে সেখানে যথেষ্ট লোকজনও থাকেন। তারমধ্যেই একটি শিশু-কন্যাকে বাসের মধ্যে তুলে নিয়ে গিয়ে যেভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে, তা যথেষ্টই উদ্বেগজনক।
বাসের মধ্যে ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের সবথেকে মর্মান্তিক ঘটনাটি সামনে এসেছিল ২০১২ সালে, দিল্লিতে।
রাতে বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত বাসে দীর্ঘক্ষণ ধরে ধর্ষণ এবং শারীরিক নিগ্রহ চালানো হয়েছিল 'নির্ভয়া' নামে সংবাদমাধ্যমে পরিচিত হয়ে ওঠা এক প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীর ওপরে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পরে মৃত্যু হয় 'নির্ভয়ার।'
ওই ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, যার জেরে যৌন নিগ্রহ এবং ধর্ষণ রোধে কঠোর আইনও আনা হয়েছে।
ভারতে চালু হয়েছে শিশুদের ওপরে যৌন নিগ্রহ রোধ আইন পক্সো-ও। তবুও প্রতিবছরই শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ভারত সরকারের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালেই দেশে ধর্ষিত হয়েছে প্রায় কুড়ি হাজার শিশু বা কিশোরী।
যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এমন কন্যা-শিশুর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু-কন্যা এবং কুমারী নারীদের ওপরে যৌন নির্যাতনের পেছনে যেমন 'পিডোফিলিয়া' নামক মানসিক বিকৃতি কাজ করে, তেমনই ওই বয়সের মেয়েদের যৌন লালসার শিকার বানানোর পেছনে কাজ করে কুসংস্কারও।
অনেকেই মনে করে, কন্যা-শিশু বা কুমারী নারীদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে নানা যৌন রোগ নিরাময় হয়ে যায়। সূত্র: বিবিসি
মন্তব্যসমূহ