গাজার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৭৩

  যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার উত্তরে বেইত লাহিয়ার একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর  হামলায় কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এই তথ্য দিয়েছে। তবে ইসরায়েল বলেছে, গাজার একটি ‘সন্ত্রাসী’ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। খবর এএফপির। সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘গাজার উত্তরে বেইত লাহিয়ার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলার পর আমাদের এজেন্সির কর্মীরা ৭৩ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অনেকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও বেশ কয়েকজন শহীদের মরদেহ রয়ে গেছে।’ মাহমুদ বাসাল জানান, শনিবার (১৯ অক্টোবর) দিনের শেষ ভাগে ইসরায়েলের চালানো ওই হামলায় বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। হামলাটি চালানো হয় একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ইসরায়েলের সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের (আইডিএফ) কাছে আসা তথ্যের সঙ্গে হতাহতের সংখ্যার মিল নেই। তবে, এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত বিবরণও তারা দেয়নি বা কাদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছ

রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে আশা জাগাচ্ছে অনুসন্ধান বুথ

কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ওষুধ আনতে যান নূর নাহার। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে নূর নাহারের সঙ্গে ছিল তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রোজিনা। ওষুধ বিতরণ কেন্দ্রে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় না থাকায় বাইরেই মেয়েকে রেখে যান তিনি। কিন্তু ওষুধ নিয়ে যখন নূর নাহার ফেরেন, তখন দেখেন মেয়ে রোজিনা নেই। তারপর আশপাশের সব জায়গাতেই তিনি মেয়ের খোঁজ করেন। কিন্তু মেয়ের কোনো সন্ধান তিনি পাননি।

মেয়েকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নূর নাহার বলেন, ‘২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আমার স্বামীকে খুন করেছে। আজ আমি মেয়েকে হারালাম। এখন আমার কেউ রইল না। স্বামী হত্যার জন্য আমি মিয়ানমারের সেনাদের দোষ দিতাম। কিন্তু এখন মেয়েকে হারানোর জন্য কাকে দোষ দেব?’

মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নূর নাহারের মতো অনেক রোহিঙ্গা পরিবারই দাবি করছে শিশু হারানোর। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন এ রকম অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশু হারিয়ে যাচ্ছে।

সাহায্যদানকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আশঙ্কা, অনেক রোহিঙ্গা শিশুই মানবপাচারের শিকার হচ্ছে। ইউনিসেফ ও আইসিআরসি (ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস) বলছে, পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়া শিশুরাই সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এমন বাস্তবতায় হারিয়ে যাওয়া স্বজনকে খুঁজতে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের শেষ আশ্রয়স্থল অনুসন্ধান বুথগুলো।

এ রকম একটি বুথে নূর নাহার তাঁর মেয়েকে খুঁজে না পেলেও হারিয়ে যাওয়া দুই সন্তানকে খুঁজে পেয়েছেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘সকালের নাস্তার খোঁজে আমরা যখন বাইরে বের হই, এসে দেখি আমাদের দুই সন্তান সাদেক কামাল (৮) ও কামাল হোসেন (৬) ঘরে নেই। পরে আমরা হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের খুঁজে দেয় এমন একটি বুথে যাই। তারা আমাদের সন্তানকে খুঁজে দেয়।’

জাতিসংঘের হিসাবমতে, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। হামলা চালালে, পালিয়ে আসার সময় এবং বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থেকেও শিশুরা হারিয়ে যাচ্ছে।

পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া এসব শিশুকে খুঁজে দিতে স্বেচ্ছাসেবকরা অস্থায়ীভাবে বুথ খুলেছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট এ রকম হারিয়ে যাওয়াদের খুঁজে দিতে রিস্টোরিং ফ্যামিলি লিংক (আরএফএল) খুলেছে। থাইংখালী, বালুখালী ও কুতুপালংয়ে তাদের এ রকম বুথ রয়েছে। এসব বুথে এসে কেউ খুঁজে পাচ্ছে আপনজনদের, আবার কেউ কেউ শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছে।

কুতুপালংয়ের যে বুথের সাহায্যে শামসুল আলম তাঁর সন্তানকে খুঁজে পান সেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন নাজির আহমেদ। তিনি নিজেও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় সন্তান ও পরিবার হারিয়েছেন।

নাজির আহমেদ বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৩২টি পরিবারহারা বা হারিয়ে যাওয়া শিশুর সন্ধান আমরা পেয়েছি। এ রকম শিশু পেলে আমরা ঘোষণা করে দিই। এভাবে ঘোষণা দিয়ে আমরা প্রায় ১৮০টি শিশুকে তাদের পারিবারের হাতে তুলে দিয়েছি, বাকিদের ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’

‘প্রতিদিন আমি ২৫ থেকে ৩০টি এ রকম ঘোষণা দিয়ে থাকি।’ সূত্র:আলজাজিরা

মন্তব্যসমূহ