গাজার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৭৩

  যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার উত্তরে বেইত লাহিয়ার একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর  হামলায় কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এই তথ্য দিয়েছে। তবে ইসরায়েল বলেছে, গাজার একটি ‘সন্ত্রাসী’ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। খবর এএফপির। সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘গাজার উত্তরে বেইত লাহিয়ার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলার পর আমাদের এজেন্সির কর্মীরা ৭৩ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অনেকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও বেশ কয়েকজন শহীদের মরদেহ রয়ে গেছে।’ মাহমুদ বাসাল জানান, শনিবার (১৯ অক্টোবর) দিনের শেষ ভাগে ইসরায়েলের চালানো ওই হামলায় বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। হামলাটি চালানো হয় একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ইসরায়েলের সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের (আইডিএফ) কাছে আসা তথ্যের সঙ্গে হতাহতের সংখ্যার মিল নেই। তবে, এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত বিবরণও তারা দেয়নি বা কাদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছ

‘বত্রিশ ঘন্টা সাগরে ভেসে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম’


৩২ ঘন্টা সাগরে ভেসে বেড়ানোর পর বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ম্যাথিউ ব্রাইস। মনে মনে তখন তিনি প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন মৃত্যুর জন্য।
গত রোববার সকালে তিনি ব্রিটেনের আরগাইল উপকুল থেকে সাগরে সার্ফিং করতে যান। কিন্তু তীব্র বাতাস আর ঢেউ তাকে উপকূল থেকে মাঝ সাগরে নিয়ে যায়। তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
ম্যাথিউর বাবা জন আর মা ইসাবেলা তাদের ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু তারপর হঠাৎ তারা ফোন পেলেন এক পুলিশ ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে। তাঁদের ছেলেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গেছে।
ম্যাথিউ ব্রাইস বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কিভাবে ঢেউ আর বাতাসের তোড়ে তিনি সাগরে ভেসে যান এবং সেখানে কিভাবে ৩২ ঘন্টা কুলে ফিরে আসার জন্য লড়াই করেছেন।
২৩ বছর বয়সী ম্যাথিউ গত রোববার গাড়ি চালিয়ে যান সাগর তীরে। সকাল এগারোটার দিকে তিনি তার সার্ফিং বোর্ড নিয়ে পানিতে নামেন।
কিন্তু শীঘ্রই তার সার্ফিং এর আনন্দ আতংকে রূপ নেয়। তীব্র বাতাস আর ঢেউয়ের তোড়ে তিনি ক্রমশ তীর থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন।
বাতাস যেন থামছিল না। সেই সঙ্গে ঢেউ।
একটা পর্যায়ে সাগর তীরের এক মাইলের মধ্যে ফিরে আসতে সক্ষম হন তিনি। কিন্তু তারপরেই আবার সাগরের স্রোত তাকে নিয়ে যায় আরও গভীরে।
দিনের আলো তখন ফুরিয়ে আসছে। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। কি করবেন বুঝতে পারছেন না ম্যাথিউ।
হঠাৎ দেখলেন অনেক দূরে কিছু মাছ ধরা নৌাকা। কিন্তু তার চিৎকার সে পর্যন্ত পৌঁছালো না।
তখন আতংক গ্রাস করলো তাকে।

বিশাল সাগরে ম্যাথিউ তখন একেবারেই নিঃসঙ্গ। চারিদিকে কেবল সাগরের ঢেউ। আর উপরে আকাশ। এই দুয়ের মাঝখানে যেন আর কিছু নেই।
ম্যাথিউর সন্ধানে তখন হেলিকপ্টার তল্লাশি চলছে সাগরের বিশাল এলাকা জুড়ে। কিন্তু ম্যাথিউ তখনো পর্যন্ত কোন হেলিকপ্টার দেখেননি।
“আমার মনে হচ্ছিল, আমি মরতে চলেছি। আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি যে সাগরেই আমার মৃত্যু হবে। সকালে আরেকটি সুর্যোদয় দেখবো এমন আশা আমি করিনি।”
এরপর ম্যাথিউ দূরে জাহাজের আনাগোনা দেখতে পেলেন। ম্যাথিউ তখন জাহাজ চলাচলের চ্যানেলে যাওয়ার চেষ্টা করলেন।
তার সার্ফিং বোর্ড থেকে পানি কেটে আগানোর চেষ্টা করলেন।
কিন্তু ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ক্লান্ত ম্যাথিউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন।

সারাদিন সাগরে স্রোতের সঙ্গে ভেসে চললেন ম্যাথিউ। এবার রাত ঘনিয়ে আসার পর ম্যাথিউ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হলেন।
“আমি বুঝতে পারছিলাম, আমি আর এই রাত পার করতে পারবো না। কাজেই আমি সূর্যাস্ত দেখছিলাম।”
তারপর হঠাৎ তিনি দেখলেন তার মাথার ওপর একটি হেলিকপ্টার।
উত্তেজনায় তার সার্ফিং বোর্ড থেকে লাফিয়ে হেলিকপ্টারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে থাকলেন তিনি।
আতংক তাকে গ্রাস করছিল যে হেলিকপ্টারটি হয়তো তাকে না দেখতে পেয়ে ফিরে যাবে।
কিন্তু তারপর হেলিকপ্টারটি হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে ম্যাথিউর দিকে আগাতে থাকলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি।
হেলিকপ্টার থেকে দড়ি নামিয়ে টেনে তোলা হলো ম্যাথিউকে। তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।
“আমাকে যারা উদ্ধার করেছে, তারা আসলে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পর ম্যাথিউ আর সার্ফিং করতে চান না। সূত্র: বিবিসি

মন্তব্যসমূহ