ভারত যাওয়ার পথে মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তসহ আটক ৪

  ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা হয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার পথে একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল হক বাবু এবং দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকায় একটি প্রাইভেট কারসহ চারজনকে আটক করে ধোবাউড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে জনতা। দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অন্যদিকে একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু সম্পাদকদের একটি সংগঠন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি। এ সময় অন্য দুজন হলেন- একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান, প্রাইভেট কার চালক মো. সেলিম। ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চাঁন মিয়া বলেন, রোববার রাতে সীমান্ত এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা আটক করে তাদের ধোবাউড়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। আটকরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ‘৪০০ কোটির পিয়ন’ জাহাঙ্গীর

 




প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ধান দেওয়া ‘৪০০ কোটি টাকার পিয়ন’ জাহাঙ্গীর আলম দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে জানা গেছে।


জাহাঙ্গীরের বড় ভাই, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মীর হোসেন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর দুই বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক সন্তান আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী দেশে আছে, তবে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। রবিবার রাতে তার কাছেই চলে গেছে জাহাঙ্গীর।’


জাহাঙ্গীরের বড় ভাই বলেন, ‘আমরা এতদিন জানতাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া আছে। হঠাৎ রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার কথা শুনে লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ি। সন্ধ্যায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখনও জাহাঙ্গীর দেশেই ছিল। এরপর রাতে শুনেছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে।’


চীন সফর শেষে গতকাল রবিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধরলেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা বিশ্বাস করি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সই থাকবে। আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরে ব্যবস্থা নিয়েছি।’


প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সংশ্লিষ্ট নিউজসহ ফেসবুকে জাহাঙ্গীর আলমের নাম উল্লেখ করে শেয়ার করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অভিযান এবার নোয়াখালীর চাটখিলে। অর্থাৎ অভিযোগের তীর নোয়াখালীর চাটখিলের জাহাঙ্গীর আলমের দিকেই ছিল।


 এদিকে গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী কার কথা বলেছেন এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে এতটুকু বলা যায়, জাহাঙ্গীর আলম নামে গণভবনের একজন পাচক ছিলেন। যিনি পরবর্তী সময় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিয়ন) হিসেবে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছে কাছে থাকতেন। এক পর্যায়ে তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রমাণসহ ধরা পড়ায় গণভবন থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। জাহাঙ্গীর ব্যতীত কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সন্ধান সূত্রগুলো দিতে পারেনি।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও তার দুর্নীতি ও অপতৎপরতা কমেনি। নানান জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পরিচয় দিয়েও বড় অঙ্কের টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা প্রতারিত হয়ে গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে এই অপকর্মের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের কর্মকর্তারাও বিব্রত অবস্থায় পড়েন। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।


 জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পরিচয় দিয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহসভাপতির পদ ভাগিয়ে নেন। এ ছাড়াও রয়েছে তার ব্যক্তিগত বডিগার্ড, আছে বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি। তিনি যখন এলাকায় যান তখন তার গাড়ি বহরে অনেক প্রভাবশালীরা প্রটোকল দিতে ব্যস্ত থাকেন বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীরের এক ভাই আলমগীর চাটখিলের খিলপাড়া ইউনিয়নের তিনবারের চেয়ারম্যান। প্রথমবার যখন নির্বাচন করেন তখন তার প্রতিপক্ষকে মামলা ও হামলা করে এলাকা ছাড়া করান।


পরবর্তী সময় ২টি নির্বাচনে কাউকে প্রার্থী হতেই দেননি জাহাঙ্গীর। এই আলমগীরের বিয়ের দাওয়াতে সরকারের ১২ জন মন্ত্রী এবং বেশ কজন এমপিকে অংশ নিতেও দেখেছেন অনেকে। এ ছাড়া তার বোনের ছেলে মাকসুদুর রহমান শিপন নোয়াখালী জেলা পরিষদের দুবারের সদস্য ও এবারের প্যানেল চেয়ারম্যান। তিনি সাংবাদিক পরিচয়ও বহন করেন। পাশাপাশি নোয়াখালীতে কে সাংবাদিকতা করবেন, আর কে করবেন না- এটার নির্ধারণও অনেক সময় শিপন করে দেন বলে অভিযোগ আছে।


 জাহাঙ্গীর গত দুটি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন, কিন্তু পাননি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়েও ভেবেছিলেন। কাছাকাছি সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ছবিসহ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় সে অবস্থা থেকে সরে আসেন তিনি। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকেন জাহাঙ্গীর।


 যারা দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সংগ্রহ করেছেন তাদের ভাষ্য, জাহাঙ্গীর কখনো প্রধানমন্ত্রীর ব্যাগ বহন করতেন, কখনো খাবার সামনে এগিয়ে দিতেন। দেশের বাইরে গেলেও এই জাহাঙ্গীরকে প্রধানমন্ত্রী নিয়ে যেতেন। ঢাকার বাইরে রাজনৈতিক সভাতেও জাহাঙ্গীরকে দেখা যেত।


অভিযোগ আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থাকার সুবাদে তিনি এলাকায় ভিত তৈরি করতে থাকেন। গণভবনের অদূরে একটি অফিস নেন। সেই অফিসে বসেই মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যসহ নানা কিছু নির্ধারণের চেষ্টা করতেন।

মন্তব্যসমূহ