হিজবুল্লাহর ভয়াবহ রকেট হামলা, প্রতিরোধে ব্যর্থ ইসরাইল

লেবানন থেকে ফিলিস্তিনির হাইফা এবং গালিলি অঞ্চলের দিকে অন্তত ৩৫টি রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। সেনা সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ লেবানন থেকে এই রকেট হামলা চালানো হয়, এবং এসব রকেট হাইফা এবং পশ্চিম গালিলির দখলকৃত অঞ্চলে আঘাত হানে। জায়নিস্ট গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো রকেট বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হয়নি। হাইফা শহরের বিভিন্ন এলাকায় রকেট হামলার সতর্কবার্তা শোনার খবর পাওয়া গেছে। আল-মায়াদিন টিভি চ্যানেল জানায়, হাইফার উত্তরে আল-কিরিওত এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। জায়নিস্ট গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দখলকৃত পশ্চিম গালিলির ইয়ারা শহরে এক ভবন হিজবুল্লাহর মিসাইল হামলায় পুড়ে যায়। অপরদিকে, আভিভিম, ইয়রাউনসহ ওপরের গালিলির বেশ কয়েকটি শহরে রকেট হামলার সতর্কবার্তা বাজানো হয়। সূত্র: মেহের নিউজ

সিলেটে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩ লাখেরও বেশি মানুষ

 



 স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পুরো সিলেট। তৃতীয় দফা বন্যার মোকাবেলা করছেন বিভাগের চারটি জেলার লোকজন।


বিশেষ করে সিলেট নগরসহ জেলার ৮০ ভাগ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগের ওপরে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখনো বন্যার পানি স্থিতিশীল থাকায় দুর্ভোগে রয়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষজন।

শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় রেকর্ড পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্বজন ও ঘর বাড়ি হারিয়েছেন অনেকে। বানের পানিতে ভেসে গেছে গরু, মহিষ, হাঁস-মুরগি। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিঃস্ব অবস্থায় বাড়ি ফিরে গেছেন।   


আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, থেমে থেকে বৃষ্টি হওয়ায় পানি উঠা-নামা করছে। এ অবস্থায় ঘরে ফেরা লোকজন শূন্য থেকে শুরু করতেও ভয় পাচ্ছেন। যেখানে ঘরে উনুন জ্বলে না, সেখানে ঘর তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ানো দুষ্কর কর্মহীন মানুষগুলোর।


বন্যায় সিলেট বিভাগে সোয়া কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৫ জন। বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৬ লাখ ২২ হাজার ৯৬৮টি।


সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জের প্রায় ৩০ লাখ লোকজন। সিলেট জেলা ও মহানগরে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৩ জন, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩৬ এবং হবিগঞ্জে ৮৩ হাজার ৪৯০ জন।


সিলেট জেলা: বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) পর্যন্ত সিলেট জেলা প্রশাসনের বন্যা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনসহ ১৩ টি উপজেলা ও ৫ টি পৌরসভার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ পরিবার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৩ জন। আর কাঁচা ঘরবাড়ি বন্যায় ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৯১টি।


সিলেট সিটি করপোরেশনসহ জেলায় ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন ৩৭ হাজার ১৭৬ লোকজন।


পক্ষান্তরে বরাদ্দপ্রাপ্ত মোট ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনা খাবারের মধ্যে ১৯ হাজার ৯১৮ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। নগদ এক কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত ৬৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


সুনামগঞ্জ: ৪টি পৌরসভা ও ১১টি উপজেলা এবং ৮৮টি ইউনিয়নের সব ক’টি প্লাবিত দেখিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা। পানিবন্দি ৫৫ হাজার ৬৬০ পরিবার এবং জনসংখ্যার ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।


জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণকৃত ত্রাণের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন। নগদ অর্থ ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বর্তমানে চালের মজুত নেই। বিতরণকৃত শুকনো খাবার ২৩ হাজার প্যাকেট। এছাড়া ২৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৩ হাজার ১০০ লোকজন রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ২১ হাজার, মিহলা ২০ হাজার, শিশু ১১ হাজার ৫০০ এবং প্রতিবন্ধী শিশু ৬০০ রয়েছেন। জেলায় দুর্গতদের সহায়তায় ১২৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।


হবিগঞ্জ: জেলা প্রশাসনের(ট্রেজারি, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈন খান এলিস বলেন, বন্যায় ৬১৭ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ২৪ হাজার ২৩০টি পরিবার এবং ৮৩ হাজার ৪৯০ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০টি।


জেলায় ৩৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৩৪৫ জন আশ্রিতদের মধ্যে বর্তমানে আট হাজার ১৯০ জন পুরুষ, আট হাজার ১৪ জন নারী, পাঁচ হাজার ১১ জন শিশু এবং ২০৪ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন।


পক্ষান্তরে ৮০০ মেট্রিকটন চাল, ৪০ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৩১ হাজার ৪১৬ ডানো শিশু খাদ্যের জন্য বিতরণ করা হয়।


মৌলভীবাজার: জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাদু মিয়া বলেন, বন্যায় ৫৮ হাজার ৫৯৫ পরিবার এবং ২লাখ ৬২ হাজার ৭৩৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া ১৪ হাজার ৩০৯টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে জেলায় ৮০৫ মেট্রিক টন চাল, ১৭শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ১৪৮ টন চাল, ২৫ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার রয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি নির্মাণ/মেরামতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ/অনুদান পেতে পারেন।


বাংলানিউজ

মন্তব্যসমূহ