মাওলানা মামুনুল ও ফয়জুল করিমের বক্তব্য শুনে দুই শিক্ষকের উৎসাহে মাদ্রাসার দুই ছাত্র কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে বলে জানিয়েছেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন।
রোববার বিকাল ৪টায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্সের সভাকক্ষে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত ডিআইজি নহিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এমএম তানভির আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গ্রেফতার হওয়া দুই মাদ্রাসাছাত্রের বরাত দিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, মাওলানা মামুনুল ও ফয়জুল করিমের বক্তব্য শুনে তারা এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়।
এদিকে ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শহরতলী জুগিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার মাদ্রাসা ইবনে মাসউদের দুই শিক্ষক এবং একই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মাদ্রাসা ইবনে মাসউদের হেফজ বিভাগের ছাত্র মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামের সমশের মৃধার ছেলে আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯), দৌলতপুর উপজেলার ফিলিফনগর গ্রামের সামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০), একই মাদ্রাসার শিক্ষক মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মো. আল আমীন (২৭) এবং পাবনা জেলার দিয়াড় বামুন্দি গ্রামের আজিজুল মণ্ডলের ছেলে মো. ইউসুফ আলী (২৭)।
ডিআইজি বলেন, ওই ছাত্ররা তাদের মাদ্রাসা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে গিয়ে ভাস্কর্য ভাংচুর করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কালো কোট পরা ওই দুই ছাত্র মই বেয়ে ভাস্কর্যের বেদিতে ওঠে। পরে একজনের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে ভাস্কর্যে ভাংচুর চালায়। মিশন শেষ করে তারা একইভাবে হেঁটে মাদ্রাসায় ফিরে বিষয়টি দুই শিক্ষককে (গ্রেফতার হওয়া) জানায়। এ সময় শিক্ষকরা ওই ছাত্রদের মাদ্রাসায় না থেকে বাড়ি চলে যেতে বলেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ। মাদ্রাসা থেকে হাতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে সাদা রং লেগেছিল।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, রাতের আঁধারে ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ঘটনার শ্বাসরুদ্ধকর ২৩ ঘণ্টার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং যাচাই-বাছাই করে ইতোমধ্যে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাইব। তাদের কাছ থেকেই আমরা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করব কারা কীভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে এ ভাস্কর্য ভাংচুরে।
ডিআইজি বলেন, এটা নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আমরা দেখছি না। এ ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ তার শতভাগ পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে কাজ করবে; যাতে কোনোভাবেই পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। পুলিশ এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অপরাধ শনাক্তে যেসব প্যারামিটার নিয়ে পুলিশ কাজ করে তার সবই প্রয়োগ করেই তদন্তকাজ সম্পন্ন করবেন। কীভাবে ধর্মীয় বয়ান শুনে এ জাতীয় কাজে উৎসাহিত হয় তার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে এর মাত্রা নিরূপণ করা হবে এবং সারা দেশেই এর আরও কোনো বাস্তবতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষক মুহাম্মদ মুসা বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত খারাপ হয়েছে। এটি করা ছাত্রদের ঠিক হয়নি। তাদের বিচার হবে। আমাদের কিছু বলার নেই। সেখানে ১৫০ জন ছাত্র লেখাপড়া করে। শিক্ষকের সংখ্যা ৫ থেকে ৬ জন।
এদিকে ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া নানা উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শহরবাসী আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা থেকে রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে চরম বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল।
এতে জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন সভাপতিত্ব করেন। সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভা থেকে ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে রোববারও দুপুরের পর থেকে ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় শহরের বিভিন্ন স্পটে রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকাল ৪টায় এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ। মিছিলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি নেতৃত্ব দেন।
মন্তব্যসমূহ