শুক্রবার ক্লাসের সিদ্ধান্ত হয়নি, ভুলবশত ফেসবুকে পোস্ট হয়েছিল

শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বরাতে যে বক্তব্যটি শিক্ষামন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দিয়েছিল তা ভুলবশত বলে জানিয়েছে তারা। অপর এক পোস্টে আজ রোববার (৫ মে) বিকেলে ৪টার দিকে এই তথ্য জানায় তারা। এই পোস্টে মন্ত্রণালয় আরও বলেছে,  শুক্রবারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফেসবুক পেজ থেকে আগের পোস্টটি সরিয়ে নতুন পোস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে ‘শুক্রবার শিক্ষা খোলার বিষয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড পেজে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে দেওয়া তথ্য ভুলবশত পোস্ট করা হয়েছে। এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত শনিবারের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’  এর আগে একই পেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে বলা হয়েছিল, ‘আমাদের এখন বছরে স্কুলের মোট কর্মদিবস ১৮৫টি। এর মধ্যে ২০ দিন নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নের জন্য রাখা হয়েছে। স্কুলের কর্মদিবস যদি আরও কমে যায়, শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে।’

জমি সঙ্কটে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় ভিয়েতনাম’ হবার সুযোগ হাতছাড়া

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ যদি তাদের রপ্তনি সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চায় তাহলে যে কোনো ভাবেই হোক তাদের বড় শিল্প সংস্থাগুলোর জন্য জমির সংস্থান করতে হবে।

দিল্লিতে বিশ্ব ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা এ মন্তব্য করেছেন, বছর-কয়েক আগে। স্যামসাং বহুজাতিকের জন্য জমির ব্যবস্থা করতে না-পারায় বাংলাদেশ ওই অঞ্চলে ‘দ্বিতীয় ভিয়েতনাম’ হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছে।

তাছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পে সরকার যে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, সেগুলো অন্য শিল্পের ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত না-করা হলে রপ্তানির পরিমাণ যে বাড়বে না, সে ব্যাপারেও তারা সতর্ক করে দিয়েছেন।


দক্ষিণ এশিয়াকে কীভাবে বিশ্বে রপ্তানি একটি পাওয়ারহাউসে পরিণত করা যায়, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক।

‘এবারে দক্ষিণ এশিয়ার পালা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে অনেকটা অংশ ব্যয় করা হয়েছে বাংলাদেশের জন্য-যেখানে বিশ্ব ব্যাঙ্ক মনে করছে রপ্তানি বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না বাংলাদেশে।

রিপোর্টের অন্যতম প্রণেতা ও বিশ্ব ব্যাংকের অন্যতম প্রধান অর্থনীতিবিদ ভিনসেন্ট পালমাডে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল জমি’।

তার কথায়, ‘বড় লগ্নিকারীদের জন্য শিল্পের উপযুক্ত জমি পাওয়াটাই এখানে খুব মুশকিল। হাতের কাছে বিরাট উদাহরণ হল স্যামসাং, যারা বছর কয়েক আগে ১২০ কোটি ডলারের বিশাল বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল, অন্তত ৫০ হাজার লোকের চাকরি হত তাতে। তাদের দরকার ছিল তিনশো একর জমি’।

‘কিন্তু সবগুলো এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন ভর্তি থাকায় বাংলাদেশ তাদের সেই জমি দিতে পারেনি। যদি দিতে পারত, আমরা বিশ্বাস করি ইলেকট্রনিক শিল্পে আজ ভিয়েতনাম যেখানে বাংলাদেশও সেখানে পৌঁছতে পারত।’

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে এখনো সবচেয়ে বড় সাফল্যের কাহিনী হল গার্মেন্ট শিল্প-কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ হল, বন্ডেড ওয়্যারহাউস থেকে শুরু করে কাঁচামাল আমদানির আরো যে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার তৈরি পোশাক শিল্পকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে, অন্য সম্ভাবনাময় শিল্পের ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা করা হচ্ছেনা।

এখানে তারা দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ফুটওয়্যার বা চামড়ার তৈরি জুতো শিল্পের। রিপোর্টের সহ-প্রণেতা ও দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র কান্ট্রি ইকনমিস্ট ডেনিস মেডভেডেভ বলছিলেন, ‘আসলে যে পলিসি রেজিম বা নীতিমালা অনুসরণ করে গারমেন্ট শিল্প সাফল্য পেয়েছে-জুতো, চামড়া বা অনুরূপ শিল্পেও তা অনুকরণ করা যায়, প্রশ্নটা হল রাজনৈতিক সদিচ্ছার’।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যদি তুলনামূলক পারিশ্রমিকের বিচার করি, তাহলে বিভিন্ন শিল্প খাতে বাংলাদেশের শিল্প মজুরি কিন্তু এখনো অন্য বহু দেশের তুলনায় রীতিমতো কম্পিটিটিভ। অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রেই আশেপাশের দেশগুলোর তুলনায় তাদের বেশ কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে।

হ্যাঁ রপ্তানির ক্ষেত্রে সুযোগ আছে প্রচুর কিন্তু বাংলাদেশের মতো জনবহুল আয়তনে ছোট একটি দেশে শ্রমিক এখনো শস্তা হলেও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান কীভাবে হবে?

বিশ্ব ব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশের এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বা ইপিজেড মডেল এতদিন বেশ সফল হলেও তাকে আরো প্রসারিত করার সুযোগ আছে।

ভিনসেন্ট পালমাডে বলছিলেন, ‘সব উপযুক্ত জমির ব্যবহার হচ্ছে না এমনও দৃষ্টান্ত আছে’।

তিনি বলছিলেন, ‘ধরুন চট্টগ্রামে রপ্তানিযোগ্য শিল্প স্থাপনের মতো বিশাল একটা জমি পড়ে আছে গত প্রায় কুড়ি বছর ধরে। এই এক্সপোর্ট জোনটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না নানা মামলা বা বিরোধের কারণে’।

বাংলাদেশ সরকার যদি সেই বিরোধের নিষ্পত্তি করে এই জমিটা শিল্প সংস্থাগুলোকে দিতে পারে তাহলে যারা জমির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা বিরাট স্বস্তি পাবেন, দেশের রপ্তানি অবশ্যই বাড়বে বলে মন্তব্য করেন ভিনসেন্ট পালমাডে।

‘এবারে দক্ষিণ এশিয়ার পালা’ শীর্ষক রিপোর্টে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্ভাবনাকে শ্রীলঙ্কার তুলনীয় পর্যায়েই চিহ্নিত করা হয়েছে, কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে জমির ব্যবস্থা করতে না-পারলে সেই সম্ভাবনার অনেকটাই মাঠে মারা যাবে।

জমির অভাব বাংলাদেশে বাস্তবতা ঠিকই কিন্তু রপ্তানি বাড়াতে চাইলে তার সমাধান সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে বলে বিশ্ব ব্যাংক মনে করেন।

সূত্র: বিবিসি

মন্তব্যসমূহ