ভারত যাওয়ার পথে মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তসহ আটক ৪

  ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা হয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার পথে একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল হক বাবু এবং দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকায় একটি প্রাইভেট কারসহ চারজনকে আটক করে ধোবাউড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে জনতা। দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অন্যদিকে একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু সম্পাদকদের একটি সংগঠন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি। এ সময় অন্য দুজন হলেন- একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান, প্রাইভেট কার চালক মো. সেলিম। ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চাঁন মিয়া বলেন, রোববার রাতে সীমান্ত এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা আটক করে তাদের ধোবাউড়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। আটকরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

টানা ৭ ঘণ্টার বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর বাড়ি-হাপাতালে পানি, নির্ঘুম রাত

 




টানা ৬-৭ ঘণ্টার অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি উপচে সিলেট নগরীতে প্রবেশ করেছে। পানি প্রবেশ করেছে ওসমানী হাসপাতালেও


রোববার মধ্যরাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে সিলেট নগরীর উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, জামতলা, তালতলা, শেখঘাট, কলাপাড়া, মজুমদার পাড়া, লালদীঘিরপাড়, তোপখানা, কাজির বাজার, তেররতন, সোবহানীঘাটসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।


নগরীর লালাদিঘির পাড় এলাকার মামুন আহমদ বলেন, এমনিতেই ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলে সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলায় অবস্থা ভয়াবহ। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি টইটুম্বুর করছে কয়েকদিন থেকে। আজ টানা বৃষ্টিতে আমাদের ঘরে পানি উঠেছে।


নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা অনুপ চক্রবর্তী জানান, বাসায় হাঁটুপানি। আসবাবপত্রসহ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র পানিতে তলিয়ে গেছে।


২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর যদি নদী খনন করা হতো, তাহলে বাসিন্দাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না বলে মন্তব্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।


নগরীর মিরের ময়দান পায়রা এলাকার বাসিন্দা মো: আজমল আলী তার ফেসবুক আইডিতে মেয়র ও এমপিকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, ‘নগরবাসীর দাবি একটাই, সুরমা নদী খনন চাই। সুরমা নদী খনন করুন, বন্যা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করুন।’


মডেল আশফাক রানা লিখেন, ‌‘এই মুহূর্তে সিলেট শহরের অবস্থা খুবই নাজেহাল ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বৃষ্টি না থামলে ২০২২ সালের মতো আবার বন্যা দেখা দিতে পারে।’


আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন লিখেন, ‘আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটছে সিলেটবাসীর। প্রথমে রাত ১টায়, পরে ৩টা ৫০ মিনিটে- দুইবার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সবকিছু, পানি বাড়ছেই।’


নগরীর তালতলার বাসিন্দা রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ‘২০২২ সালের পরে ঘরে আবারো পানি ঢুকল। পরিবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছি। বন্যার আগে যদি নদী, ছড়া, খাল, বিল খনন করা হতো তাহলে নগরীতে পানি ঢুকত না।’


গতকাল বিকেলে সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়টি জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেট নগরীসংলগ্ন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা থেকে এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু রাতের এই অতি বৃষ্টিতে নতুন করে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


রোববার সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। বেশ কিছু স্থানে কমে এসেছিল পানি। কিন্তু রাতে অতিবৃষ্টিতে আবারো নগরীতে পানি বেড়েছে।


এদিকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকে পড়েছে।


সোমবার ভোর থেকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।


সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানায়, ভোর থেকে হাসপাতালে পানি প্রবেশ করেছে। মেঝেতে যারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তড়িঘড়ি করে তাদের একজনের বিছানায় দুই রোগীকে জায়গা দেয়া হয়। তাছাড়া ওয়ার্ডে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি প্রবেশ করার ফলে চিকিৎসা নিতে এসে উল্টো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের উত্তরপাশ ঘেঁষে প্রবাহিত ছড়ার আশ-পাশে বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। এ কারণে ছড়া দিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক বাসিন্দা পানির প্রবাহ ওসমানী মেডিক্যালের একমাত্র ড্রেনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। ফলে ড্রেন উপচে বৃষ্টির পানি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে প্রবেশ করে। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগ, ২৬, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে হাঁটু সমান পানি রয়েছে।


এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের নিচতলা পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। ২০২২ সালের বন্যার সময়ও পানি ঢুকে যায়। সংশ্লিষ্টদের বার বার জানানো হলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় অতিবৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে পড়ে যায়।


সূত্র : ইউএনবি


মন্তব্যসমূহ