শুক্রবার ক্লাসের সিদ্ধান্ত হয়নি, ভুলবশত ফেসবুকে পোস্ট হয়েছিল

শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বরাতে যে বক্তব্যটি শিক্ষামন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দিয়েছিল তা ভুলবশত বলে জানিয়েছে তারা। অপর এক পোস্টে আজ রোববার (৫ মে) বিকেলে ৪টার দিকে এই তথ্য জানায় তারা। এই পোস্টে মন্ত্রণালয় আরও বলেছে,  শুক্রবারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফেসবুক পেজ থেকে আগের পোস্টটি সরিয়ে নতুন পোস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে ‘শুক্রবার শিক্ষা খোলার বিষয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড পেজে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে দেওয়া তথ্য ভুলবশত পোস্ট করা হয়েছে। এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত শনিবারের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’  এর আগে একই পেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে বলা হয়েছিল, ‘আমাদের এখন বছরে স্কুলের মোট কর্মদিবস ১৮৫টি। এর মধ্যে ২০ দিন নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নের জন্য রাখা হয়েছে। স্কুলের কর্মদিবস যদি আরও কমে যায়, শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে।’

পাকিস্তানে ‘গৃহযুদ্ধের’ ভুয়া খবর নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মাতামাতি

 


গ্যাসের লাইনে ফুটো হয়ে একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল করাচীতে, কিন্তু সেখানে কোনো সহিংসতা হয়নি। - ছবি : বিবিসি


ভারতীয় নিউজ সাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সপ্তাহে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এক ভুয়া খবরে দাবি করা হচ্ছিল পাকিস্তানের করাচী শহরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।


পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে সৈন্যরা সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে অপহরণ করেছে। শীর্ষস্থানীয় এক বিরোধী রাজনীতিককে গ্রেফতার করতে পুলিশকে বাধ্য করার জন্যই নাকি ঐ পুলিশ প্রধানকে অপহরণ করা হয়। এই খবরের পরই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে করাচীতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে খবর প্রচার করা হতে থাকে।


পাকিস্তানি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরটি সীমান্তের ওপারে ভারতীয় গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অনেক দ্রুত। তবে সেখানে ঘটনার বিবরণ বিস্তৃত হয় অনেক দূর। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হতে থাকে, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর করাচীর বহু পুলিশ অফিসার নিহত হয়েছে। করাচীর রাস্তায় ট্যাংক দেখা গেছে।


টুইটারে একটি ভুয়া ভিডিও চালাচালি হতে থাকে যেটিতে নাকি করাচীর এই কথিত গৃহযুদ্ধের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।


কিন্তু বাস্তবে এর কোন কিছুই আসলে সত্য নয়।


এই রাজনীতিকের গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছিল, তাতে স্থানীয় পুলিশ এবং বিরোধী রাজনৈতিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে কোন সহিংসতাই ঘটেনি।


পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্য রয়েছে তিক্ত বৈরিতা। এই দুটি দেশ যে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালায় সেটাও মোটামুটি জানা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর এ পর্যন্ত ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে।


গতবছর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কিছু নেটওয়ার্ককে ফেসবুক নিষিদ্ধ করেছিল। একইভাবে ভারতপন্থী কিছু আন্তর্জাতিক ভুয়া নিউজসাইট এবং থিংক ট্যাংকের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়েছিল। মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য এসব ভারতপন্থী ভুয়া নিউজ সাইট এবং থিংক ট্যাংক চালানো হয়।


তবে এবারের ঘটনায় অনেক ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট এবং নামকরা সংবাদ প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যন্ত লাখ লাখ ফলোয়ার এবং পাঠকের কাছে এই খবরটি প্রচার করা হয়েছে, যে খবরটি ছিল একদম ভুয়া।


'অস্তিত্বহীন জায়গায় যুদ্ধ'

মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জামাতা সাফদার আওয়ানকে গ্রেফতারের ঘটনাকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এই গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাপারে পাকিস্তানের সেনা প্রধান এখন একটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।


এর আগের দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে করাচীতে বিরোধী দলগুলোর এক বিরাট সমাবেশ হয়। করাচী হচ্ছে সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী। সেখানে বিরোধী দলগুলোর জোরালো সমর্থন আছে।


মঙ্গলবার রাতে একটি প্রায় অপরিচিত টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয় যে করাচীতে সৈন্যদের সঙ্গে পুলিশের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। করাচীর রাস্তায় ট্যাংক নেমেছে। অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে।


প্রথম এই টুইট কে করেছিলেন তার স্পষ্ট নয়। বিবিসি অনেক খোঁজখবর নিয়েও @drapr007 নামের এই টুইটার অ্যাকাউন্টটি কে চালায় সে সম্পর্কে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি।


এই টুইটের এক ঘন্টা পর একই অ্যাকাউন্ট থেকে আরেকটি টুইট করা হয়। এবারের টুইটে ব্রেকিং নিউজ হ্যাশট্যাগ দিয়ে বলা হয়, করাচীর গুলশান-ই-বাগ এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং সিন্ধু পুলিশের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে।


যারা করাচী শহর চেনেন, তারা জানেন যে সেখানে গুলশান-ই-বাগ নামে কোন এলাকার অস্থিত্বই নেই। কিন্তু বেশিরভাগ পাঠক তো আর সেটি জানেননা।


আর করাচীতে কোন লড়াই আসলে চলছিল না। সেখানে রাস্তায় কোন ট্যাংকও দেখা যায়নি।


কিন্তু করাচীর এই কথিত গৃহযুদ্ধের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। একটি গ্যাস লাইনে বড় বিস্ফোরণের পর এই গুজব যেন আরও ডালপালা ছড়ালো।


এবার অনেক ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে এবং বড় বড় ভারতীয় গণমাধ্যমে এই কথিত 'গৃহযুদ্ধের' খবর প্রচার করা শুরু হলো। এর মধ্যে সিএনন-নিউজএইটিন, জি নিউজ এবং ইন্ডিয়া টুডে পর্যন্ত ছিল।


যেসব ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এই গৃহযুদ্ধের খবর প্রচার করা হচ্ছিল, তার একটি প্রশান্ত প্যাটেল নামে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর। তিনি একের পর এই টুইটে দাবি করতে থাকেন করাচীতে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে পুলিশ এবং সেনাসদস্য নিহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রেডিওতে দেশাত্মবোধক গান বাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি মার্কিন নৌবাহিনি করাচী বন্দরে আসতে যাচ্ছে, এরকম খবর দিয়েও টুইট করেন তিনি।


বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিম কিছু কিছু অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট যাচাই করে দেখেছে, যেগুলো থেকে করাচীতে গৃহযুদ্ধ চলছে বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছিল। এই অ্যাকাউন্ট এবং সাইটগুলো সিন্ধু পুলিশের বলে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এসব অ্যাকাউন্ট বা সাইট আসলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দেখতে পেয়েছে বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিম।


ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়, যেখানে করাচীর লড়াইয়ের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়।


এই ঝাপসা এবং প্রায় অন্ধকার ভিডিওতে দেখা যায় কিছু যুবক একটি ভবনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। ভবনটির একপাশে আগুন জ্বলছে। যুবকরা মনে হচ্ছে যেন পাকিস্তানের সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দিতে পাথর ছুঁড়ছে। এই ভিডিওটি আদৌ পাকিস্তানে ধারণ করা কিনা বা এটি আসলো বানানো কিনা, সেটি বিবিসি যাচাই করতে পারেনি।


ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড একটি অধুনা বিলুপ্ত ভারতীয় কোম্পানির নামে নিবন্ধিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। তাদের একটি টুইটার একাউন্ট ২০১৫ সাল থেকে সচল। এই টুইটার অ্যাকাউন্টটি কাউকে ফলো করে না। তবে এই অ্যাকাউন্টটি যারা ফলো করেন, তাদের মধ্যে দুজন হচ্ছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা।


সমন্বিত অপপ্রচার

ভারতীয় গণমাধ্যমের এসব দাবি অবশ্য সাথে সাথেই চ্যালেঞ্জ করা হয় পাকিস্তানের মূলধারার গণমাধ্যমে।


ভারতীয় গণমাধ্যমের এসব রিপোর্ট নিয়ে টুইটারে বহু মানুষ বিদ্রুপ-হাসাহাসি করেছেন সারাদিন।


'সিভিলওয়ারকরাচী', 'ফেইকনিউজ' এবং 'ইন্ডিয়ানমিডিয়া' হ্যাশট্যাগে তারা অনেক রঙ্গ রসিকতা মূলক পোস্ট এবং মিম শেয়ার করেন টুইটারে।


পাকিস্তানের নামকরা সঙ্গীতশিল্পী এবং অভিনেতা ফখরে-ই-আলম টুইট করেন: "করাচীর গৃহযুদ্ধ এত ভয়াবহ আকার নিয়েছে যে ফুড পান্ডায় অর্ডার করা আমার নিহারি আর বিরিয়ানি ডেলিভারি দিতে আসা ছেলেটিকে মাইনফিল্ডের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে। খাবারের সঙ্গে তাকে তার একে-ফরটি-সেভেন, আরপিজি এবং নাইনএমম পিস্তলও বহন করতে হয়েছে।"


লেখিকা বিনা শাহ লিখেছেন, "আমি করাচীতে থাকি। আমি মাত্রই মুদি দোকান, বেকারি ঘুরে, বাজার সেরে, কিছু কাপড়-চোপড় কিনে ঘরে ফিরেছি। করাচীতে যদি গৃহযুদ্ধ চলে থাকে আমি সেটি কোথাও দেখিনি।"


অনেকে এসব ভুয়া খবরকে ভারতী গণমাধ্যমের 'সমন্বিত অপপ্রচার' বলে বর্ণনা করেন।


'সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পর্কহীন অপপ্রচার‌'

হরতোষ সিং বাল ভারতের একটি নামী নিউজ ম্যাগাজিন ক্যারাভানের রাজনৈতিক সম্পাদক। তিনি বিবিসিকে বলেন, "এই দুটি দেশেই মিডিয়ার একটি অংশ এরকম খেলায় ব্যস্ত, তারা যা করে তার সঙ্গে সাংবাদিকতার কোন সম্পর্ক নেই।"


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সিনিয়র ভারতীয় সাংবাদিক বলেন, ভারতীয়রা পাকিস্তানের এমন একটি চিত্র তুলে ধরতে চায় যে পাকিস্তানের পতন ঘটছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং পুলিশের মধ্যে এরকম বিরোধের খবর সেই সেই বয়ানের সঙ্গে ভালোই যায়।


"এসব ভুয়া তথ্য যেসব টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলো পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে এরা আসলে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক।"


পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডিজিটাল স্ট্রাটেজি বিষয়ক উপদেষ্টা আরসালান খালিদ বলেন, ভারতীয় মিডিয়ার তরফে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমন্বিত অপপ্রচারের ঘটনা এটাই প্রথম নয়।


টুইটার তার ঘোষিত নীতিমালা কতটা মেনে চলছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।


ফেইক নিউজের ব্যাপারে তাদের নীতিমালা কী, বিবিসি বার বার চেষ্টা করেও টুইটারের কাছ থেকে সে প্রশ্নের কোন জবাব পায়নি।


সূত্র : বিবিসি

মন্তব্যসমূহ