ভারতের দিল্লিতে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর ২৩ বছর বয়সী মেডিকেল ছাত্রী ‘নির্ভয়া’ হত্যার ঘটনায় চার আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট।
স্থানীয় সময় শুক্রবার জনাকীর্ণ আদালতে দণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ।
রায় ঘোষণার সময় সর্বোচ্চ আদালত ধর্ষণের বিষয়টিকে ‘ভিন্ন জগতের গল্প’ হিসেবে আখ্যা দেন। একই সঙ্গে নির্ভয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকে ‘পাশবিক ও দানবীয়’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আদালত।
নির্ভয়া বা নিঃশঙ্ক নামের মেডিকেলছাত্রীর নিহত হওয়ার রায়ের সময় তাঁর মা-বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁর মাকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা গেছে।
বিচারপতি দীপক মিশ্র, ভানুমতি ও অশোক ভূষণের বেঞ্চ বলেন, ‘মামলার আসামিরা তাঁর (নির্ভয়া) প্রাণহরণেই ব্যস্ত ছিল। তাঁকে (নির্ভয়া) ভোগ্য বস্তু হিসেবে দেখা হয়েছে।’
বিচারকত্রয়ী বলেন, ওই অপরাধ ‘বেদনার সুনামি’ তৈরি করেছে। আসামিরা নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধুকে পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা দুজনকে গাড়িচাপা পর্যন্ত দিতে চেয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনার পর ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভের মধ্যেই ২০১৩ সালে বিচারিক আদালত চার ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর এক বছর পর ২০১৪ সালে হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রাখেন। হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত ও মুকেশ। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তাঁদের।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি চলচ্চিত্র দেখার পর ফিজিওথেরাপির ছাত্রী ও তাঁর বন্ধু দক্ষিণ দিল্লিতে একটি বাসে চড়েছিলেন। তাঁরা চালকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ওই বাসে থাকা ছয়জন মেডিকেলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। তাঁকে ও তাঁর বন্ধুকে রড দিয়ে পেটায়।
মারধরে মেডিকেলছাত্রীর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার ১৩ দিন পর লাখ লাখ মানুষকে কাঁদিয়ে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে রায় বহাল রাখার প্রতিক্রিয়ায় নির্ভয়ার বাবা বিএন সিং বলেন, ‘আমি খুশ (খুশি)।’
মামলা চলাকালে ২০১৩ সালের মার্চে ওই বাসের চালক রাম সিংকে ঝুলন্ত অবস্থায় দিল্লির তিহার কারাগারের সেলে পাওয়া গেছে। এর কয়েক মাস পরই চারজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত।
গত বছর বিনয় শর্মা নামের আরেক আসামি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গ্রেপ্তারের সময় ১৮ বছরের চেয়ে কিছু কম বয়সী ছিল মামলার ষষ্ঠ আসামি। কিশোর অপরাধী হিসেবে সে তিন বছর সাজা কেটেছে। এরপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তাকে একটি সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ