ভারতে ট্রাকে করে মোষ নিয়ে যাওয়ার অপরাধে এবার খোদ রাজধানী দিল্লির বুকেই আক্রান্ত হতে হল তিন ব্যক্তিকে, যাদের মধ্যে দুজনই মুসলিম।
শনিবার বেশি রাতে দক্ষিণ দিল্লির একটি অভিজাত এলাকায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের না ধরে পুলিশ বরঞ্চ ওই তিনজনকেই 'পশুদের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা'র অভিযোগে গ্রেফতার করেছে।
দিল্লি পুলিশ আরও দাবি করেছে, ওই হামলায় কোনও গো-রক্ষা বাহিনী বা কাউ ভিজিলান্টে-রা জড়িত ছিল না, বরং পিএফএ নামে একটি পশুপ্রেমী সংস্থা বা এনজিও-র কর্মীরাই মোষ বহনকারী ওই ট্রাকটিকে আটক করেছিল।
কিন্তু পুলিশের ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ তারা যে এনজিও-টির নাম করেছে, সেই পিএফএ-র কার্যালয় থেকেএকটি বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।
রাজধানী দিল্লিতে মোষের মাংস নিষিদ্ধ নয় - কিন্তু দিল্লিতে মোষ আসে পার্শ্ববর্তী রাজ্য হরিয়ানা বা উত্তরপ্রদেশ থেকে, আর সেখানে গরু-মোষ চালানের ওপর ইদানীংকার কড়াকড়িতে দিল্লিতেও টান পড়েছে মোষের মাংসের বাজারে।
আর সেই কড়াকড়ি যে এবার দিল্লিতেও ঢুকে পড়েছে, গতকাল বেশি রাতে তা নির্মমভাবে টের পেয়েছেন রিজওয়ান, আশু আর কামিল নামে তিন যুবক। দিল্লির উপকণ্ঠে হরিয়ানার গুরগাঁও থেকে ট্রাকে তেরো-চোদ্দটা মোষ চাপিয়ে তারা নিয়ে আসছিলেন দিল্লিতে গাজীপুরের পাইকারি বাজারে - কিন্তু রাস্তায় দক্ষিণ দিল্লির কালকাজির কাছে তাদের পথ আটকায় স্থানীয় একদল লোক। পরে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, যারা তাদের বাধা দিয়েছিল তারা ছিল 'পিপল ফর অ্যানিম্যাল' বা পিএফএ নামে একটি এনজিও-র লোকজন।
দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রামিল বানিয়া বলেন, "প্রায় চোদ্দটা মোষকে নিয়ে তারা গাজীপুরের মান্ডিতে যাচ্ছিল বৈধ স্লটারিং বা জবাই করানোর জন্য। কিন্তু এর মধ্যে পিএফএ-র একটি দল তাদের রাস্তা আটকায় এবং তারপর দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও তর্কাতর্কি হয়। ট্রাকচালক ও তার সহকারী তিনজনের ছোটখাটো আঘাত লাগে, তাদের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে দেখানো হয়েছে। মোষগুলোকে খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, ফলে নিষ্ঠুরভাবে পশু পরিবহনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলারও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আর এই দুর্ঘটনার সঙ্গে কোনও গো-রক্ষা বাহিনীর সম্পর্ক নেই, এরা একটি পশুপ্রেমী এনজিও - দিল্লিতে পশু অধিকার রক্ষার জন্য এরা বহুদিন ধরে কাজ করে আসছে।"
ওই তিনজন যুবককেই এখন পুলিশ গ্রেফতার করেছে, অন্যদিকে হামলাকারী কাউকেই এখনও আটক করা হয়নি।
দিল্লি পুলিশ যে এনজিও-টির নাম করেছে, সেই পিএফএ-র চেয়ারপার্সন হলেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী। মানেকা গান্ধীর কার্যালয় থেকে এদিন অবশ্য একটি বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে পিএফএ-র বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সারা দেশ জুড়ে পিএফএ-র প্রায় হাজার দশেক সদস্য থাকলেও দিল্লিতে তাদের কোনও শাখাই নেই - আর কেউ দিল্লিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে সে তার ব্যক্তি পরিচয়েই সে কাজ করেছে, পিএফএ সদস্য হিসেবে নয়।
তবে ভারতের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে হামলাকারীদের কথোপকথনে পরিষ্কার তারা যারাই হোক, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এ কাজ করেছে।
নিজেদের গৌরব গুপ্তা, মোহিত ইত্যাদি নামে পরিচয় দিয়ে তারা জানান, তাদের কাছে খবর ছিল হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে মোষ পাচার করা হচ্ছে - আর সেটাও খুব অমানবিক পরিবেশে। সেই "জন্যই আমরা সেই হরিয়ানা থেকেই ওদের পিছু নিয়ে আসছিলাম। তারপর এখানে ওদের গাড়িটি আটকে দিয়ে ওদের ধরা হয়েছে - ঘটনা বলতে এটুকুই।" পাশ থেকে আরও একজন যোগ করেন - মাংসের জন্য কাটা হবে বলেই এই মোষগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, আমরা ঠেকিয়ে দিয়েছি।
এই ব্যক্তিরা নিছক একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য, না কি আসলে কোনও গোরক্ষা বাহিনীর সঙ্গেই যুক্ত - তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েই গেছে।
কিন্তু ঘটনা হল, মোষ বহনকারী বৈধ একটি ট্রাকে হামলা করার জন্য পুলিশ এদের কারও বিরুদ্ধেই এখনও ব্যবস্থা নেয়নি - কিন্তু আক্রান্ত তিন যুবকের ঠাঁই হয়েছে জেলে। আর তারা যে চোদ্দটির মতো মোষ নিয়ে যাচ্ছিল, সেগুলোকে এখন কালকাজি থানার পাশে একটি গোশালায় পুলিশকেই দেখাশুনো করতে হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি
মন্তব্যসমূহ