কাশ্মীরে গত তিন দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা গুলির আঘাতে ২০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। এক মঙ্গলাবরই আহত হয়েছে অন্তত ১১ জন। আহতদের বেশিরভাগই তের থেকে উনিশ বছর বয়সী।
এই ঘটনা ২০১৬ সালে কাশ্মীরেরচরমঅস্থিরতার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। ওই সহিংসতায় কয়েকশ’ লোক চোখে মারাত্মক আঘাত নিয়ে এখনো দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছে।
ছররা গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত শরীর ও চোখের আঘাত নিয়ে গত তিন দিনে শ্রীনগরের হাসপাতালে আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চোখের মারাত্মক ইনজুরি তাদের দৃষ্টি বৈকল্য ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত রবিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামে অন্তত আট জন ছররা গুলিতে আহত হন। আহদের দুজন চোখে গুরুতর জখম নিয়ে বর্তমানে শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার একই সমস্যা নিয়ে অন্তত ১১ জনকে শ্রীনগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
যদিও আহতের ১০ জনকে ‘বেমিনা’ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। অপরজন শ্রীনগরের হরিসিং হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, আহত কয়েকজনের জখম অত্যন্ত মারাত্মক। তাদের চোখে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা জানান।
বেমিনা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘হিলাল আহমেদ দার (২২) ও রিয়াজ আহমেদ দার (২০) নামে দুজনের বাম চোখে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। তাদের অপারেশন করা হয়েছে। কয়েকজনের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্য একজনের চোখের আইরিশ নষ্ট হয়ে গেছে।’
ডাক্তাররা জানান, রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং পুরোপরি সুস্থ হতে কিছু দিন সময় লাগবে। অনেকের চোখে কয়েক দফা সার্জারি অপারেশনও চালাতে হতে পারে বলে তারা জানান।
চক্ষু বিষেজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন প্রাণঘাতী এই ‘মিনি বুলেট’ চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যাইহোক, এই অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও এর ব্যবহার সেখানে থেমে নেই।
২০১৬ সালে ১১৫০ জনেরও বেশি লোক ছররা গুলিতে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাদের বেশিরভাগই ছিল যুবক, কিশোর-কিশোরী ও এমনকি এদের মধ্যে অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুও ছিল। আহত এই মানুষগুলো যন্ত্রণাদায়ক ট্রমায় ভোগতেছে। এর ফলে ভুক্তভোগীদের অনেকে তাদের দৃষ্টি হারানোর পথে।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি সম্প্রতি ছররা বন্দুক ব্যবহারে ‘সংযম’ হওয়ার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বছরের ডিসেম্বর নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আপনাদের ক্যাম্প বা থানায় হামলা হয়, সে দায়ভার আমি নেব। কেউ যদি আপনাদের দিকে পাথর ছোঁড়ে, তখন আপনারা নিজেদেরকে যতটা সম্ভব সংযত রাখবেন। ছররার বিকল্প খুঁজে পাওয়া গেলে এটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে।’
সূত্র: গ্রেটার কাশ্মীর
মন্তব্যসমূহ