মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো দমন-পীড়ন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট-আসিয়ানের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া।
সোমবার মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে আসিয়ান দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি আনিফা আমান এ আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গাদের মানবিক ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কাজে সমন্বয় এবং তাদের ওপর পরিচালিত নিপীড়নের ঘটনা তদন্ত করতেও আসিয়ানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আনিফাহ আমান বলেন, ‘মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের বিষয়টি ধীরগতিতে অগ্রগতি হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে দেশটির সেনারা রোহিঙ্গাদের গণগ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ধর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি রাখাইনের পরিস্থিতি আঞ্চলিক উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কাজেই এর সমাধানও সবাইকে একসঙ্গে মিলেই করতে হবে।'
সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে আনিফা বলেছিলেন, ‘নির্দোষ মানুষের প্রাণহানিতে ও জনগণের বাস্তুচ্যুতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে মালয়েশিয়া জড়িত সকল পক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’
‘আসিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে মালয়েশিয়া আসিয়ানের প্রতিষ্ঠিত নীতিগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন আছে। বিশেষ করে, অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার যে নীতি তা আমরা মেনে চলতে বাধ্য।’
‘তবে, আমরা এও বিশ্বাস করি যে, মানবাধিকারের প্রচার ও তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক নীতি মেনে চলতে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা আসিয়ান সনদ এবং আসিয়ান মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।’
রাখাইনের দীর্ঘায়িত সমস্যাটি ত্বরিত এবং টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে মায়ানমারকে সহায়তা করার জন্য মালয়েশিয়া প্রস্তুত আছে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মায়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’কে উদ্দেশ্য করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচার গণহত্যায় বিশ্ববিবেক নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না।
সু চির নোবেল পাওয়াকে ব্যঙ্গ করে নাজিব রাজাক বলেন, ‘অং সান সু চির নোবেলের কাজ কী? আমরা তাকে বলতে চাই, যথেষ্ট হয়েছে...আমরা অবশ্যই মুসলমান ও ইসলামকে রক্ষা করব।’
এ সময় তিনি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনকে (ওআইসি) যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। ওআইসি ও জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দয়া করে কিছু করুন। জাতিসংঘ কিছু করেনি। বিশ্ব এভাবে গণহত্যার বিষয়টি বসে বসে দেখতে পারে না।’
রাখাইনে সর্বশেষ সহিংসতায় ৭ শতাধিকেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্তত ৩,০০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস করার মাধ্যমে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। তাদের নির্যাতনে ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে এবং ৫ শতাধিকেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী বর্মি সৈন্যদের হাতে ধর্ষিত হয়েছেন।
সূত্র: রয়টার্স/আরটিএনএন
মন্তব্যসমূহ