দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা জাপানে খুব সাধারণ একটি ঘটনা।
নানা কারণে মানুষ, কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে।
কিন্তু ২০১৬ সালে দেখা গেছে অভিনব এক ঘটনা যাতে সন্তানের অপরাধের জন্যেও পিতামাতারা অনুষ্ঠান করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও জাপানে ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি চালু রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ক্ষমা প্রার্থনাকে জাপানি ভাষায় বলা হয় শাজাই কাইকেন।
প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে সমবেত লোকজনের সামনে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি পাঠ করেন এবং মাথা নত করে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কিন্তু এরকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পিতামাতাকে তাদের সন্তানের জন্যে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনার কথা খুব একটা শোনা যায় না।
গত অগাস্ট মাসে খুব আবেগঘন এক বক্তব্য দিয়ে তার ২২ বছর বয়সী ছেলের কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন অভিনেত্রী আতসুকু তাকাহাতা।
যৌন হামলার অভিযোগে তার ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো।
পরে কোন ধরনের অভিযোগ না এনেই পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
তবে আইন ও আদালতের এসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তার মা প্রকাশ্যে এক অনুষ্ঠান করে বলেছেন, সন্তানের কথিত অপরাধের জন্যে তারও আংশিক দায় রয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালে টেলিভিশনের জনপ্রিয় এক উপস্থাপক তার ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, টেলিভিশনে করা তার শো থেকেও তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
চুরি করার চেষ্টার অভিযোগে তার সন্তানকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, "আমি মনে করি একজন পিতা হিসেবে আমার নৈতিক কিছু দায়িত্ব রয়েছে।"
তবে এই রীতি যে শুধু সুপরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমিত তা নয়। জুলাই মাসে মানসিক প্রতিবন্ধীদের একটি আশ্রমে ছুরি মেরে ১৯ জনকে হত্যা করার ঘটনায় খুনির পিতা তার কর্মস্থলে এক বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এর কয়েক বছর আগে, ২০০৮ সালে, ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ যখন ব্যস্ত একটি রাস্তায় সাতজনকে হত্যা করে, তারপর হত্যাকারীর পিতা তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সন্তানের অপরাধের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
"আমাদের ছেলে গুরুতর একটি অপরাধ করেছে। এই ঘটনায় যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি," ওই পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এভাবেই ক্ষমা চাওয়া হয়।
তারপর তারা যখন মাথা নত করে ক্ষমা চান তখন সাংবাদিকরা সেই ছবি তুলে পত্রিকাতেও প্রকাশ করেছেন।
বিবিসি
মন্তব্যসমূহ