শুক্রবার ক্লাসের সিদ্ধান্ত হয়নি, ভুলবশত ফেসবুকে পোস্ট হয়েছিল

শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বরাতে যে বক্তব্যটি শিক্ষামন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দিয়েছিল তা ভুলবশত বলে জানিয়েছে তারা। অপর এক পোস্টে আজ রোববার (৫ মে) বিকেলে ৪টার দিকে এই তথ্য জানায় তারা। এই পোস্টে মন্ত্রণালয় আরও বলেছে,  শুক্রবারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফেসবুক পেজ থেকে আগের পোস্টটি সরিয়ে নতুন পোস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে ‘শুক্রবার শিক্ষা খোলার বিষয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড পেজে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে দেওয়া তথ্য ভুলবশত পোস্ট করা হয়েছে। এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত শনিবারের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’  এর আগে একই পেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষামন্ত্রীর বরাতে বলা হয়েছিল, ‘আমাদের এখন বছরে স্কুলের মোট কর্মদিবস ১৮৫টি। এর মধ্যে ২০ দিন নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নের জন্য রাখা হয়েছে। স্কুলের কর্মদিবস যদি আরও কমে যায়, শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে।’

গাজা এখন শিশুদের মৃত্যুপুরী

 




সুজি ইশতোকানা। বয়স মাত্র সাত বছর। ইসরাইলি বিমান হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় সংগ্রাম করছে প্রশ্বাস টেকাতে।


‘তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?’ চিকিৎসকের এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলল, ‘আমি ডাক্তার হতে চাই।’ সে কথা বলে খুব কষ্টে। খেতেও ওর কষ্ট হয়। ওর অন্য চার ভাইবোন আর মা বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে নিহত হন। পরিবারে এখন সে আর তার বাবা। এটা গাজার একটিমাত্র পরিবারের ঘটনা।


আরো বহু পরিবারকে বরণ করতে হয়েছে এমন মর্মান্তিক দুর্ভাগ্য। ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। এ পর্যন্ত সেখানে তাদের বর্বর হামলায় কমপক্ষে ৬৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে ৫ বছরের শিশুও।


সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্রই তুলে এনেছেন এপি, আলজাজিরা ও বিবিসির সংবাদকর্মীরা। গাজা উপত্যকায় উপর্যুপরি বিমান হামলায় শিশুরা যে শুধু মারাই যাচ্ছে তা নয়, বেঁচে যাওয়া শিশুরাও শিকার হচ্ছে মানসিক আঘাতের। যুদ্ধ আর মৃত্যুর আতঙ্কে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ইসরাইল ও হামাসের এ যুদ্ধ গত ১২ বছরে চতুর্থবার। প্রতিবারই ইসরাইলিদের বিমান হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা।


আমি বাচ্চাদের ‘বাবা’ ডাক শুনতে পেয়েছিলাম : গত রোববার রিয়াদ ইশতোকানা ৪২ বছর বয়সি তার ৫ সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে বাসার ভেতরেই ছিলেন। হঠাৎই বিকট শব্দে তাদের ভবনটি ভেঙে পড়ল সবার ওপর। আর কিছু মনে নেই তার। পাঁচ ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করেন ধ্বংসস্তূপের নিচে। উদ্ধারকর্মীরা এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। তখনো রিয়াদ জানেন না, তার চার সন্তান আর স্ত্রীর করুণ পরিণতির কথা। রিয়াদ বলছিলেন, ‘আমি ধ্বংসস্তূপের নিচে ওদের বাবা ডাক শুনতে পেয়েছিলাম। ধীরে ধীরে ওদের কণ্ঠস্বর নেমে আসছিল।’ মঙ্গলবার শিফা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি অন্য চার সন্তান আর ওদের মায়ের মৃত্যুর খবর শুনতে পেয়েছিলেন। এর পরই তিনি বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে সুজিকে চুমুতে ভরিয়ে তোলেন, যে চুমুর সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল রিয়াদের অশ্রুধারা।


ঈদের পোশাকেই ঘুমিয়েছিল বাচ্চারা : ঈদের পরদিন। ৩৭ বছর বয়সি মোহাম্মদ আল হাদিদি তার স্ত্রী আর চার বাচ্চাকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে গিয়েছিলেন ওদের মামার বাড়িতে। ঈদের পোশাক আর নানা খেলনা নিয়েছিল বাচ্চারা আনন্দ করবে বলে।


রাতে ঈদের পোশাকেই ঘুমিয়েছিল বাচ্চারা। হাদিদি ছিলেন ওদের কয়েক মিটার দূরে। আচমকা যেন বাজ পড়ল। কী ঘটছে তা দেখতে বাইরে বের হলেন তিনি। আরেকটি বিকট শব্দের পর পেছনে তাকিয়ে দেখেন ওই বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে-যেখানে ওদের মা-সহ বাচ্চারা ঘুমিয়ে ছিল।


হাদিদি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার পাঁচ মাসের শিশুটি বেঁচেও মরার মতো। ওর মুখে আঘাত রয়েছে, ডান পা ভেঙে গেছে। বাকিরা তো আগেই চিরনিদ্রায় শায়িত। আমার এ নিষ্পাপ বাচ্চারা ওদের কী ক্ষতি করেছিল?’


সতর্ক না করেই বোমা হামলা : লিনা আল-মুত্রাবাই রাতের খাবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল তার চার বছরের মেয়েটিও। ঠিক সে সময়ই হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল তাদের ভবন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নিজেকে খুঁজে পেলেন ধ্বংসস্তূপের নিচে। মা-মেয়ে দুজনই গুরুতর আহত হয়েছেন।


সাধারণ মানুষকে মারার লক্ষ্য না থাকলে কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই তারা কেন বোমা হামলা করছে, আলজাজিরা প্রতিনিধির কাছে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন লিনা।


জীবনের সব আনন্দ শেষ করে দিল ইসরাইলিরা : ফারহা ইব্রাহিম খলিল জুনাইদ রান্নায় মগ্ন ছিলেন। হঠাৎই তিনি একটি মিসাইলের শব্দ শুনতে পান। জানালার ফাঁক গলে রাস্তার ওপর থাকা একটি মোটরসাইকেলের ওপর পড়েছে ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্রটি। ঠিক তখনই ছাদ থেকে নেমে এলো তার দুই ছেলে মোহাম্মদ ও সালাম।


ওরাই মাকে জানাল, ওদের বড় ভাই ওয়াসিম মারা গেছে। বড় ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে নির্বাক হয়ে ওদের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকেন ফারহা। এরপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন মেঝেতে। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর তিনি জানতে পারেন ওয়াসিম মারাত্মক জখম হয়েছে। তার পাঁচ বছরের ছেলের পেটে আঘাত করেছে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ।


কিন্তু মিসাইলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন শিশুসহ আরও সাতজন। হাসপাতালে স্থানান্তরের পর ওয়াসিম বেঁচে গেলেও ততক্ষণেও সে জানে না, ছোট ভাইটি আর নেই। ছেলেটির মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের বাবা খামিস জুনায়েদ চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আমার জীবনের সব আনন্দ শেষ করে দিলো ইসরাইলিরা।’


কাউকেই জীবিত আনতে পারিনি : রোববার ভোরবেলা। গাজা শহরের আল ওয়াহদার রাস্তার ওপর উপর্যুপরি বোমা ফেলল ইসরাইলি বাহিনী। ওই হামলায় একই পরিবারের কমপক্ষে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের অধিকাংশই শিশু-যেখানে এক শিশুর বয়স ছিল আনুমানিক ছয় মাস। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানো হয়নি। নিহতদের সমাধি হলো ওই ধ্বংসস্তূপেই।


বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য সানা আল-কাওয়ালেক আহত অবস্থায় বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি শুধু ধোঁয়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনি। আমার ছেলেকেও যেন একবার জড়িয়ে ধরেছিলাম। কিন্তু আমি ওদের কাউকে জীবিত আনতে পারিনি। সবাই চাপা পড়েছে।’


যেন ওদেরকেই টার্গেট করে ছোড়া হয়েছিল : গত সপ্তাহে ইসরাইলিদের হামলায় নিহত কনিষ্ঠতম শিশুটির নাম ইদো আভিগাল। সিদারোত শহরে করা ওই হামলায় নিহত ওই শিশুর বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। অভিযোগ রয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী অবিশ্বাস্যভাবে একটি দুর্গের কক্ষে থাকা ওই শিশুটিকে হত্যা করেছিল। রকেট হামলার সাইরেন বেজে ওঠার পরই তার মা তাকে দুর্গের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি ওদের। রকেটের শার্পেল গিয়ে আঘাত হানে ওই দুর্গের ভেতরেই। যেন রকেটটি ওদের টার্গেট করেই ছোড়া হয়েছিল। হামলায় ইদোর মা ও বোন আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।


বড় হয়ে ডাক্তার হতে চেয়েছিল মেয়েটি : গত সপ্তাহের বুধবার বেলা ১১টার দিকে আরব-ইসরাইলি স্কুলের ছাত্রী নাদাইন আওয়াদ তার মা-বাবার সঙ্গে বেরিয়েছিল। ফেরার পথে তাদের গাড়ি ও আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে আছড়ে পড়েছিল রকেটগুলো।


বাবাসহ নাদাইনের মৃত্যু হলো গাড়িতেই। মা এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন দিচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়। মেধাবী ছাত্রী নাদাইন বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল বলে জানিয়েছেন তার মা। তার স্কুলের অধ্যক্ষ জানিয়েছিলেন, মেধাবী এ মেয়েটি বিশ্ব পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর ছিল। এ মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।


খেলতে খেলতেই চলে গেল : একটু পরেই মা-বাবার সঙ্গে ইফতারে বসবে ওরা। তার আগের সময়টুকু খেলাধুলায় মগ্ন ছিল ওরা। গাজার উত্তরের শহরে রাস্তায় খেলায় মেতেছিল ইব্রাহীম ও তার ভাই। হঠাৎই কয়েকটি শব্দ হলো।


ওদের বাবা ইউসুফ আল মাসরি বলেন, ‘খেলব বলে বেরিয়েছিল ওরা। খেলতেই চলে গেল। শব্দ শুনে দৌড়ে বাইরে এসে দেখি শিশুরা রক্তের নদীতে শুয়ে আছে। আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমাকে মাফ করে দিন।’ কান্নায় ভেঙে পড়লেন ইউসুফ।

মন্তব্যসমূহ