গাজার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৭৩

  যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার উত্তরে বেইত লাহিয়ার একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর  হামলায় কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এই তথ্য দিয়েছে। তবে ইসরায়েল বলেছে, গাজার একটি ‘সন্ত্রাসী’ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। খবর এএফপির। সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘গাজার উত্তরে বেইত লাহিয়ার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলার পর আমাদের এজেন্সির কর্মীরা ৭৩ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অনেকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও বেশ কয়েকজন শহীদের মরদেহ রয়ে গেছে।’ মাহমুদ বাসাল জানান, শনিবার (১৯ অক্টোবর) দিনের শেষ ভাগে ইসরায়েলের চালানো ওই হামলায় বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। হামলাটি চালানো হয় একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ইসরায়েলের সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের (আইডিএফ) কাছে আসা তথ্যের সঙ্গে হতাহতের সংখ্যার মিল নেই। তবে, এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত বিবরণও তারা দেয়নি বা কাদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছ

খেতে বসে পরিবার হারানো এক ফিলিস্তিনি পরিবারের গল্প

 




অন্যদিনের মতোই দুপুরে নিজ বাড়িতে খেতে বসেছিলেন ৩৩ বছরের ইয়াদ সালেহ। ১৪ বছর ধরে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন তিনি। একটু পরেই খাবার শুরু করবেন তিনি। কিন্তু তার আগেই দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, তিন বছরের কন্যা ও ভাইয়ের সঙ্গে প্রাণ যায় ইয়াদ সালেহরও। 


বুধবার দুপুরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দেইর-এল-বালা এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের অসহায়ত্বের কথাও ফুটে উঠে। 


গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে,, ১০ মে থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি বিমান হামলায় ২২৭ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৪ জনই শিশু।


বুধবার দুপুরে হুইলচেয়ারে বসে ইয়াদ সালেহ মধ্যাহ্নভোজের অপেক্ষা করছিলেন, আর কয়েকঘন্টা পরেই তার পুরো পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেল লাশের মর্গে। 


আল জাজিরার খবরে বলা হয়, বিস্ফোরণের পর ইয়াদ সালেহর লিভিং রুমের সবকিছু ভেঙেচুরে যায়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়েছিল ছোট্ট মেয়েটির দুমড়েমুচড়ে যাওয়া লাল রঙের খেলনা সাইকেল। মধ্যাহ্নভোজের জন্য ফ্রিজ থেকে খাবার বের করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। ভেঙে গেছে সেই ফ্রিজটিও। ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে টমেটো ভরা বাটিটি।


ইয়াদ সালেহর ভাই ওমর সালেহ (৩১) জানান, তার ভাই ১৪ বছর ধরে হাঁটতে পারতেন না। তিনি কোনো যুদ্ধ বা সংঘর্ষের সঙ্গে যুক্ত নন। 


একবুক ব্যথা নিয়ে তাই ওমর সালেহ’র জিজ্ঞাসা, ‘আমার ভাই কী করেছিল? তিনি তো হুইলচেয়ারে বসা। আমার ভাইয়ের মেয়ে কী করেছে? তার স্ত্রী কী করেছে। তারা তো মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করছিল।’


গাজার উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসুফ আবু আল রশিদ বলেন, ঘরের মধ্যে নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যা করা বড় অপরাধ। আর কত মৃত্যু হলে বিশ্বের বিবেক জেগে উঠবে?

মন্তব্যসমূহ