বিভিন্ন মুসলিম দেশের আপত্তি উপেক্ষা করেই, ইসলামি চরমপন্থা দমনে বিতর্কিত বিলে অনুমোদন দিলো ফ্রান্সের মন্ত্রিসভা। যাতে মুসলিম শিশুদের ঘরোয়া ধর্মীয় শিক্ষায় বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। বুধবার পাস হওয়া বিলটি নতুন বছরের শুরুতেই পার্লামেন্টে তোলা হবে। ম্যাকরন সরকারের দাবি, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, বরং কট্টরপন্থা থেকে মুসলিমদের বাঁচাতেই এ আইন।
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস ফ্রান্সে। সাবেক আফ্রিকান উপনিবেশগুলোর পাশাপাশি, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিমরা অভিবাসী হয়েছেন দেশটিতে।
সবশেষ পরিসংখ্যানে, ফ্রান্সে মুসলিমের সংখ্যা ৫৭ লাখের বেশি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ। তবে, সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থা ইস্যুতে ক্রমেই চাপ বাড়ছে বিশাল এ জনগোষ্ঠির ওপর। সবশেষ, বুধবার, কট্টরপন্থা ঠেকাতে, একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে ফরাসি মন্ত্রিসভা। সরকারের দাবি, ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি সমুন্নত রাখতেই নতুন আইন।
ফরাসী প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্স বলেন, “এ বিল ইসলাম বা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। উল্টো, এটি একটি মুক্তির বিল, সুরক্ষার বিল। ধর্মীয় গোড়ামি থেকে মুক্তি দেবে এ বিল। ধর্মনিরপেক্ষতা সবাইকে বিশ্বাস করার বা না করার গ্যারান্টি দেয়। ফ্রান্সের সামাজিক পরিসরে কোনো ধর্মীয় চর্চাকেই প্রাধান্য দেয়ার সুযোগ নেই।”
বিতর্কিত এই আইনে, শিশুদের মূলধারার পাঠদানের বাইরে ঘরোয়া বা অনানুষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষা কার্যক্রমে নজরদারির বিধান রয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে, সমাজ ও রাজনীতিতে ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশের ওপর।
জ্যঁ ক্যাসটেক্স বলেন, “কট্টর ইসলামপন্থার মতো বিপজ্জনক একটি মূল্যবোধ ঠেকাতেই এ আইন। এ মূল্যবোধের লক্ষ্যই হলো মানুষের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে সমাজে হিংসা ও সহিংসতা ছড়ানো। এটাকেই আমরা বলছি, বিচ্ছিন্নতাবাদ। একটি গোষ্ঠি পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনের ওপরে ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করছে।”
কার্টুন বিতর্কের মধ্যে, ১৬ অক্টোবর এক শিক্ষক খুন হওয়ার পর থেকেই, নজরদারি বাড়ছে ফরাসী মুসলিমদের ওপর। তল্লাশি হয়েছে মসজিদেও। যদিও, অনেকেই সতর্ক করছেন, একটি ধর্মের মানুষকে কোণঠাঁসা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
প্যারিস মুসলিম এসোসিয়েশনের মহাসচিব নাজাত বেন আলি বলেন, “হাতেগোণা কয়েকজনের কারণে সবাইকে আলাদা নজরে দেখা হচ্ছে। আসলে ইসলাম নিয়েই কিছু রাজনীতিকের সমস্যা। এর বিরোধিতা করাই তার মূল ব্যবসা।”
তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশ, শুরু থেকেই ফরাসি মুসলিমদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নিন্দা জানিয়ে আসছে।
মন্তব্যসমূহ