তুরস্কের এজিয়ান এবং গ্রিসের সামোস উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের ঘটনায় অন্তত চার শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। অন্তত ২০টি ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল তুরস্কের ইজমির প্রদেশে। তুরস্ক জানিয়েছে, ভূমিকম্পনের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬। ভূমিকম্পের কারণে গ্রিসের সামোস বন্দর এবং তুরস্কের ইজমিরে বন্যা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তি এজিয়ান সাগরের ১০ কিলোমিটার গভীরে। পার্শ্ববর্তী অ্যাথেন্স এবং ইস্তাম্বুল শহরেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে তুরস্ক জানিয়েছে, ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছে এজিয়ান সাগরের ১৬ কিলোমিটার গভীর থেকে।
তুরস্ক এবং গ্রিস ফল্ট নাইনসে অবস্থিত। ভূমিকম্প ওই অঞ্চলে স্বাভাবিক ঘটনা। ভূমিকম্প আঘাত হানার পরপরই তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তর শহরে ইজমির হাজারো বাসিন্দা ভয়ে, আতঙ্কে রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছে।
ইজমির গর্ভন জানিয়েছেন, চারটি ভবন একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে ৭০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হালুক ওজেনার শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর অন্তত ১৯টি মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এগুলোর মাত্রা ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ৮ এর মধ্যে ছিল। ১৫ সেকেন্ডের বেশি মৃদু ভূকম্পনগুলো স্থায়ী হয়। ভূমিকম্পের কারণে ফল্ট লাইনের ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার ফেটে গেছে বলে জানান তিনি।
তুরস্কের দুর্যোগ এবং জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইজমির এবং আশপাশের প্রদেশগুলোর বাসিন্দাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। তুরস্কের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউট সতর্ক করেছে, সম্ভাব্য পরর্ব্তী ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। বলা হয়, ৫ দশমিক ৮ মাত্রার পরবর্তী আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বহুতল একটি ভবন ভূমিকম্পেরে আঘাত ধসে পড়েছে। অন্যান্য ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ভবন ধসে আটকে পড়াদের উদ্ধারে অংশ নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং সরকারি বাহিনী।
ভূমিকম্পনের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকজন জেলে নিখোঁজ হয়েছে বলেও জানানো হয়। গ্রিসে ভূমিকম্প এবং এর কারণে সৃষ্ট বন্যায় বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপকূলীয় বাসিন্দাদের উপকূল থেকে দূরে অবস্থানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবারের ভূমিকম্প গ্রিসের ক্রেটে উপকূলেও অনুভূত হয়েছে।
এর আগে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় ইলাজিগ প্রদেশে এ বছরের জানুয়ারিতে ভূমিকম্পে অন্তত ৩০ জন মারা যায়। আহত হয় ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি। ২০১৯ সালে জুলাইতে গ্রিসের অ্যাথেন্সে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে শহরের অধিকাংশ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের নিকটবর্তী ইজমিতে শহরে শক্তিশালী ভূমি কম্পে ১৭ হাজার মানুষ মারা যায়।
মন্তব্যসমূহ