হিজবুল্লাহর ভয়াবহ রকেট হামলা, প্রতিরোধে ব্যর্থ ইসরাইল

লেবানন থেকে ফিলিস্তিনির হাইফা এবং গালিলি অঞ্চলের দিকে অন্তত ৩৫টি রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। সেনা সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ লেবানন থেকে এই রকেট হামলা চালানো হয়, এবং এসব রকেট হাইফা এবং পশ্চিম গালিলির দখলকৃত অঞ্চলে আঘাত হানে। জায়নিস্ট গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো রকেট বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হয়নি। হাইফা শহরের বিভিন্ন এলাকায় রকেট হামলার সতর্কবার্তা শোনার খবর পাওয়া গেছে। আল-মায়াদিন টিভি চ্যানেল জানায়, হাইফার উত্তরে আল-কিরিওত এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। জায়নিস্ট গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দখলকৃত পশ্চিম গালিলির ইয়ারা শহরে এক ভবন হিজবুল্লাহর মিসাইল হামলায় পুড়ে যায়। অপরদিকে, আভিভিম, ইয়রাউনসহ ওপরের গালিলির বেশ কয়েকটি শহরে রকেট হামলার সতর্কবার্তা বাজানো হয়। সূত্র: মেহের নিউজ

চীনের উইঘুর মুসলিমরা যেসব নির্যাতন ভোগ করছে



উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিক অঞ্চলের আগের নাম ‘পূর্ব তুর্কিস্তান’। এটির বর্তমান জিনজিয়াং প্রদেশে। চীন সরকার এ অঞ্চলকে জিনজিয়াং নাম দিয়েছে। ৯০ লাখ মুসলিম অধ্যুষিত এ অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ উইঘুর নারী-পুরুষ বন্দি রয়েছে সুরক্ষিত বন্দি শিবিরে।

চীন সরকার এ বন্দি শিবিরকে ‘চরিত্র সংশোধনাগার’ নাম দিয়েছে। চীন সরকারের দাবি, উশৃংঙ্খল অবস্থা থেকে নিরাপদ ও সুরক্ষা দিতেই তাদের এ কার্যক্রম। চরিত্র সংশোধনাগারের নামে চীন সরকার এ সব মুসলিমদের প্রতি চরম অত্যাচার ও নির্যাতন করছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তা উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিভিন্ন সূত্র জানায়, জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মুসলিমদের বন্দি করা এখনো থামেনি।

উইঘুর মুসলিম বন্দিদের মুক্তির দাবিতে কবিতা লেখার অপরাধে সম্প্রতি প্রখ্যাত হুই মুসলিম কবি কুই চুই হাউজিন (Kwe Cui Haoxin) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মুসলিম নির্যাতনের এসব তথ্য যাতে চীনের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য তারা প্রতিনিয়িত মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগে বিধি-নিষেধ আরোপ করছে। সরকারিভাবে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য জিনজিয়াং প্রদেশে ভ্রমণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

চীন সরকার কর্তৃক এসব অত্যাচার নির্যাতনে এখনও কোনো উইঘুর মুসলিম প্রতিরোধমূলক কিংবা আত্মরক্ষামূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারপরও দেশটির সরকার উইঘুর মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বর্হিবিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে প্রবাহিত করছে। অথচ দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি তারা।

এদিকে চীন সরকার মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যা ধীরে ধীরে তারা বাস্তবায়ন করছে। তার কিছু হলো-
>> জিনজিয়াং প্রদেশের কোনো পুরনো মসজিদ সংস্কার করতে না দেয়া।
>> নতুন মসজিদ নির্মাণের অনুমোদন না দেয়া।
>> বৌদ্ধমন্দিরের আদলে সংস্কার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই কেবল পুরনো মসজিদ সংস্কারের অনুমোদন মেলে।
>> প্রকাশ্যে ধর্মীয় শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই জিনজিয়াং-এ। তাই কঠিন গোপনীয়তার মধ্যেই ধর্মীয় শিক্ষা নিতে হয় তাদের।
>> পবিত্র হজকে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
>> জিনজিয়াং প্রদেশের হুই জেলার লিউ কাউলান ও কাশগড়ের প্রাচীন মসজিদে মুসলিমদের জুমআর নামাজ আদায় নিয়মিত বাধা প্রদান করা হচ্ছে।
>> নামাজ আদায়কালে প্রতি এক হাজার মুসলিমের বিপরীতে অস্ত্রসজ্জিত এক শত পুলিশ সদস্য মসজিদ ঘিরে রাখে।
>> পোস্টারের মাধ্যমে চীন সরকার এ প্রচারণা চালাচ্ছে যে, নামাজের জন্য মসজিদ নয় বরং নামাজ পড়ার জন্য ঘরে যাও।’
>> উইঘুর মুসলিমদের ইসলামি সাংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে চীন সরকার নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। মুসলিম যুবকদের বৌদ্ধ মেয়েদের বিয়ে করতে অর্থের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
>> মুসলিম গর্ভবর্তী নারীদের অবৈধভাবে গর্ভপাত করানো হচ্ছে আবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছেলেদের কাছে মুসলিম মেয়েদের জোরপূর্ব বিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও বয়েছে ব্যাপক অভিযোগ।
>> মুসলমানদের শিক্ষার সুযোগও অত্যন্ত সীমিত করা হয়েছে।।সুকৌশলে তাদের অশিক্ষিত রাখা হচ্ছে।
>> ১৯৯৬ সাল থেকে জিনজিয়াং প্রদেশের ৪০টি শহর ও গ্রামে অবস্থিত মাদরাসা ও হিফজখানার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের শিশু-কিশোররা ধর্মীয় জ্ঞান ও কুরআন হিফজ করার সুযোগ থেকে হচ্ছে বঞ্চিত।
>> ১৮ বছরের নিচে, শিশু-কিশোরদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
>> জিনজিয়াংয়ে মুসলমানদের তুর্কি ভাষা ও আরবি বর্ণমালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
>> ইতিমধ্যে জিনজিয়াংয়ের ৫০টির মতো পুরনো মসজিদ সীলগালা করে দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ।
>> অতি সম্প্রতি মক্কাভিত্তিক রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী জিনজিয়াংয়ের স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করা কুরআনের তিন লাখ কপি মুসলমানদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য পাঠিয়েছে।

কিন্তু কমিউনিস্ট কর্তৃপক্ষ সব কপি বাজেয়াপ্ত করে। পরে আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের চাপে কিছু কপি তারা ফেরত দেয়।

ফলে চীনের সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের অধিকার সীমিত হয়ে পড়ছে। মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ওঠে এসেছে এসব তথ্য।

মুসলিম বিধি-বিধান বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত অন্যান্য সব বিধানও কৌশলে মুছে ফেলার অপতৎপরতা ব্যাপকহারে চালানো হচ্ছে। মুসলিম পুরুষ ও নারীদের জন্মশাসন ও বন্ধ্যাত্ব করে দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি জিনজিয়াং প্রদেশের যে কোনো একটি শহরকে ভূগর্ভস্থ পারমানবিক পরীক্ষা ও বিষ্ফোরণের জন্য বাছাই করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করছে চীন সরকার।

শুধু তাই নয়, ১৯৬৪ সাল থেকে জিনজিয়াং প্রদেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা না করে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ক্ষতিকর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

চীন সরকারের জুলুম অত্যাচার থেকে বাঁচার লক্ষ্যে জিনজিয়াংয়ের প্রায় ২৫ লাখ অধিবাসী পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। নানা অজুহাতে উইঘুর মুসলিম নেতৃস্থানীয়দের জেল-জুলুম এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে সরকার।

উইঘুর মুসলিমদের প্রতি এত নির্যাতন সত্ত্বেও দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা আজও অটুট। শত নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখেও দেশপ্রেমে ভাটা পড়েনি। তারা চীনকে ভালোবাসে। নিজ দেশে নিজেদের প্রিয় ও পবিত্র ধর্ম ইসলাম নিয়েই বেঁচে থাকতে চায় উইঘুর মুসলিম জাতি।

আল্লাহ তাদের কবুল করুন। তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে দিন। তাদের প্রতি নাজিল হোক আল্লাহ তাআলা অবারিত রহমত।

জাগো  নিউজ


মন্তব্যসমূহ