নজিরবিহীন দাবানলে কয়েক মাস ধরে ছারখার হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। কমপক্ষে পঞ্চাশ কোটি বন্যপ্রাণী মারা গেছে। কত গাছ আর কত কীট পতঙ্গ পুড়ে গেছে, তার কোন হিসেব নেই। প্রায় সাড়ে ছয় মিলিয়ন হেক্টর ভূমি পুড়েছে। কিন্তু কিছু এলাকায় ছাই ভেদ করে প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অল্প অল্প করে গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে ঘাস ও গাছের চারা। খবর বিবিসি বাংলার
আলোক চিত্রশিল্পী মারি লোয়ে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঞ্চলের কাছে সমুদ্র তীরবর্তী কুলনারা এলাকায় গিয়ে তুলে এনেছেন তার ছবি। এসব এলাকায় মাটির উপর জমে থাকা আগুনের ছাইয়ের উপর হেঁটে হেঁটে সবুজ ঘাস এবং পুড়ে যাওয়া গাছের গুড়িতে কেবল গজিয়ে ওঠা গোলাপি রঙের কুঁড়ি দেখতে পেয়েছেন। ৭১ বছর বয়সী এই আলোকচিত্রি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার তোলা ছবি পোষ্ট করার পর তা হাজার হাজার বার শেয়ার হয়েছে। ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের মাঝেই মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে এই খবর।
লোয়ে মূলত গিয়েছিলেন আগুনে ছারখার হয়ে যাওয়া প্রকৃতির ছবি তুলতে। কুলনারার সড়ক ধরে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ঢুরাগ জাতীয় উদ্যানে থেমেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এক ধরনের অতিপ্রাকৃত নীরবতার মধ্যে দিয়ে পুড়ে যাওয়া গাছের গুঁড়িগুলোর পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন আমার পায়ের প্রতিটি ধাপের সাথে সাথে মাটি থেকে বাতাসে ছাই উড়ে যাচ্ছিল। ভয়াবহ আগুনই পারে এমন বিধ্বংসী ছাপ রেখে যেতে।’ নতুন করে ঘাস আর কুঁড়ি গজাতে দেখে তিনি যেন আশা ফিরে পেলেন। তিনি বলেন, ‘এই পুনর্জীবনের চিহ্নই আমরা কামনা করছিলাম। একটি বনের পুনর্জন্মের মুহূর্তের সাক্ষী আমি।’
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকৃতি কোটি কোটি বছর ধরে এমন দাবানল মোকাবেলা করেছে। তাই তাদের বিবর্তনের মাধ্যমে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে হয়েছে। শেফিল্ডস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. কিম্বার্লি সিম্পসন বলেন, পুড়ে যাওয়া গাছ প্রতিকূলতা থেকে দুইভাবে অভিযোজনের চেষ্টা করে। একটি হল অঙ্কুরিত হওয়ার মাধ্যমে, যা ছবিগুলোতে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর কিছু গাছ দ্রুত প্রাণ পেলেও অনেক গাছের অনেক সময় লেগে যায়। তবে অস্ট্রেলিয়ার যে ধরনের বিধ্বংসী দাবানল এবার হয়েছে, তাতে যেসব গাছ বিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করেছে তাদেরও টিকে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ