গাজার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৭৩

  যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার উত্তরে বেইত লাহিয়ার একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর  হামলায় কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এই তথ্য দিয়েছে। তবে ইসরায়েল বলেছে, গাজার একটি ‘সন্ত্রাসী’ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। খবর এএফপির। সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘গাজার উত্তরে বেইত লাহিয়ার আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলার পর আমাদের এজেন্সির কর্মীরা ৭৩ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অনেকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও বেশ কয়েকজন শহীদের মরদেহ রয়ে গেছে।’ মাহমুদ বাসাল জানান, শনিবার (১৯ অক্টোবর) দিনের শেষ ভাগে ইসরায়েলের চালানো ওই হামলায় বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। হামলাটি চালানো হয় একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ইসরায়েলের সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের (আইডিএফ) কাছে আসা তথ্যের সঙ্গে হতাহতের সংখ্যার মিল নেই। তবে, এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত বিবরণও তারা দেয়নি বা কাদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছ

মায়ানমারে ৩০০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে: ব্রিটিশ অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ

ব্রিটেনের ১৫৭ জন এমপি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সহিংসতা বন্ধে বার্মা সরকারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টির জন্য তাদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে বুধবার লেখা এক পত্রে তারা বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসে মায়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মানবিক সংকট নজিরবিহীন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ফলে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন।’

অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর ডেমোক্রেসি ইন বার্মা’র কো-চেয়ার রুশনারা আলী এমপি স্বাক্ষরিত পত্রে ব্রিটিশ এমপিগণ আশা প্রকাশ করেন যে, অতীতের মতোই ব্রিটিশ সরকার মায়ানমারের জনগণের বর্তমান সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব নেতৃত্ব প্রদর্শন করবে।


পত্রে বলা হয়, ‘এতে প্রতীয়মান হচ্ছে ২৫ আগস্ট সরকারি ভবনসমূহে হামলায় জড়িত আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরগা)-এর সদস্যদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে বরং সেদেশের সেনাবাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বিশাল এলাকা জনশূন্য করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে ওই হামলাকে।’

জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও রোহিঙ্গা সংগঠনসমূহের রিপোর্ট থেকে আমরা দেখছি যে, মায়ানমারের ইতিহাসে মানবাধিকার লংঘনের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওই পত্রে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে, লোকদের সারিবদ্ধভাবে জোরপূর্বক শোয়ানো হয় এবং অতঃপর তাদের মাথার পেছনে গুলি করা হয়, শিরচ্ছেদ ও ধর্ষণ করা হয়, লোকদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং শিশুদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানো হয়।

এতে বলা হয়, সরকারিভাবে যে কয়েকশ’ লোকের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে, নির্ভরযোগ্য রোহিঙ্গা সংস্থাগুলোর হিসেবে এই সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি এবং তা দুই হাজার থেকে তিন হাজারের মধ্যে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘ওই হামলায় ১০ হাজারের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে মায়ানমার ও প্রতিবেশি বাংলাদেশে একটা বড় ধরনের মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘দুটি অগ্রাধিকার এখন দরকার। একটি রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান বন্ধ করা এবং অপরটি জরুরি মানবিক চাহিদা পূরণ করা। আমরা মনে করি, সামরিক অভিযান বন্ধে মায়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান মিন অং হ্লায়িংকে ব্যাপকভাবে চাপ দেয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘সেনা হামলা বন্ধে সামান্যতম বিশ্বাসও যদি না সৃষ্টি হয়, তাহলে প্রভাব খাটাতে হবে, অবশ্যই প্রভাব খাটাতে হবে।’

ব্রিটিশ আইন প্রণেতাগণ বর্তমানে ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্মিজ সেনাবাহিনী যেভাবে মারাত্মক আকারে সহিংসতার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তা পর্যালোচনা করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন।

তারা বর্তমানে চলমান বার্মিজ সেনাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্যও সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে শর্তাবলী ও অঙ্গীকার পুনর্গ্রহণ ও সেদেশে আর কোনো প্রকার সামরিক সবঞ্জাম রফতানি বন্ধ করতে হবে।’

তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কাউন্সিলে জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ ও আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মায়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাবে সমর্থন প্রদানের জন্যও ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

চিঠিতে তারা নতুন রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৃষ্ট মানবিক চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দেরও আবেদন করেন।

কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন কমিশনকে স্বাগত জানিয়ে তারা অর্থনৈতিক সম্পদ ও বিশেষজ্ঞ প্রদান করে দ্রুত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এই চিঠিতে ব্রিটিশ আইন প্রণেতাদের মধ্যে স্বাক্ষর করেন, অল পার্টি পার্লামেন্টারী গ্রুপ ফর ডেমোক্রেসি ইন বার্মা-র কো-চেয়ারম্যান ব্যারোনেস গ্লিনিজ কিন্নক, এপিপিজি ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান ক্লয়েড, টিউলিপ সিদ্দিক, এড্রিন বেইলে, আফজাল খান, অ্যান কফে, চি অনওয়ার্শ, ব্যারোনেস ডোরোথেয়া গ্লিনেজ থ্রনটন, এলিয়নর স্মিথ, এঙ্গেলা ইগল, বব, ব্ল্যাকম্যান, বারবারা কীলে, এলিসন ম্যাকগভর্ন, অ্যালেক্স কুমিনঘাম ও ইভেটী কোপার।

মন্তব্যসমূহ