কলকাতার জনপ্রিয় রেডিও জকি ও কমেডিয়ান মীর আফসার আলি তার ফেসবুকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ভক্তের তীব্র রোষের মুখে পড়েছেন।
স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে নিজের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বড়দিনে মীর লিখেছিলেন ‘এরা দুজনেই আমার জীবনের সান্তা, সব ফ্যান ও বন্ধুদের মেরি ক্রিসমাস’।
কিন্তু তারপরই তার ফলোয়ারদের কেউ কেউ, যাদের অনেকেই আবার বাংলাদেশের, মীরকে আক্রমণ করে পোস্ট করতে শুরু করেন। যার মূল কথাটা হলো একজন মুসলিম হয়ে তিনি খ্রিস্টানদের উৎসব পালন করতে পারেন না।
মীর অবশ্য সেই চাপে মাথা নোয়াননি, বরং সেই সব ট্রোলের স্ক্রিনশট পোস্ট করে পাল্টা জানিয়েছেন তিনি মনে করেন বড়দিনের উৎসব সবার।
গত কয়েকদিনের মধ্যে বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খান-কারিনা কাপুর থেকে ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি বা ইরফান পাঠানের মতো ভারতের বহু তারকাই সোশ্যাল মিডিয়ার আক্রমণের মুখে পড়েছেন। কখনো সেটা ছেলের নামকরণ নিয়ে, কখনো বা স্ত্রীর পোশাক নিয়েও।
এই তালিকাতেই সবশেষ সংযোজন হলেন জনপ্রিয় টিভি ও রেডিও ব্যক্তিত্ব মীর। যিনি ফেসবুকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানানোর পর কেউ তাকে লিখেছেন এটা পাপের কাজ করলেন। কেউ পরামর্শ দিয়েছেন তওবা করে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ চাওয়ার কথা বলেছেন।
কেউ বা মন্তব্য করেছেন তুমি যতই মুক্তমনা হও, ভুলো না দিনের শেষে তুমি কিন্তু একজন মুসলমান।
মীর বলছিলেন, বরাবর সব ধর্মের উৎসব উদযাপন করে এলেও এই রকম আক্রমণের মুখে পড়া তার প্রথম।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটা ফেস্টিভ্যালই আমি নিজে সেলিব্রেট করি, বিশ্বকর্মা পুজোতেও ঘুড়ি ওড়াই। আসলে এই উৎসবগুলোতো মানুষের সঙ্গে কানেক্ট করারই একটা উপলক্ষ, তাই আমি তার কোনো সুযোগই ছাড়তে চাই না। কিন্তু এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমার প্রথমবার হল’!
মীর বলছিলেন, ‘কী বলব, এতো রীতিমতো অযৌক্তিক, প্রায় মৌলবাদী একটা মন্তব্য। ভাবুন তো আপনাকে বলা হচ্ছে তুমি যে ধর্মের শুধু সেই ধর্মের উৎসবই পালন করতে পারবে, সেটা তো পাপেরই সামিল’!
শুধু মুখে বলেই ক্ষান্ত হননি, এই ট্রোলদের জবাব দিতে মীর নিজের রেডিও অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছিলেন কলকাতার এক দরিদ্র ক্লাউন সালিম আহমেদকে, যিনি দুর্গাপুজো থেকে বড়দিন বিভিন্ন উৎসবে জোকার সেজে পয়সা রোজগার করেন।
মুসলিম হয়েও ভিন্ন ধর্মের উৎসবে কেনো সামিল হয়েছেন, সে প্রশ্নের জবাবে সালিম আহমেদ জানান তার কাছে সবচেয়ে বড় ধর্ম একটাই, আর সেটা মানবতা।
মীর আক্ষেপ করে সেই অনুষ্ঠানেই পরে বলেছিলেন, ‘বড়দিনের উৎসব যতটা মেরি (আমার), ততটাই তেরি (তোমার) সালিম মানুষ জোকারওলাও তা উপলব্ধি করেছেন, কিন্তু বাকিরা অনেকেই তা আজো বোঝেননি’!
মীর আরো জানিয়েছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা তাকে আক্রমণ করে নানা মন্তব্য করেছেন তাদের তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। ঘটনাচক্রে তাদের অনেকেই প্রতিবেশী বাংলাদেশের। যে দেশেও তার ফ্যানদের সংখ্যা কম নয়।
তার কথায়, ‘যেখানে এই পোস্টটার কথা উঠছে, সেখানে যে কমেন্টগুলো এসেছে তার প্রায় সবগুলোই কিন্তু বাংলাদেশ থেকে। তবে এ কথা বলে আমি বাংলাদেশ বা সে দেশের মানুষের সমালোচনা করতে চাইছি না। বলতে চাইছি এটা হয়তো একটা সমাপতন যে এরা প্রায় সবাই বাংলাদেশের, তবে আমি তাতে বাংলাদেশকে মোটেও হেয় করতে চাইছি না’।
মীর বলছিলেন, ‘আসলে আমার একটা মৌলিক অধিকার আছে, সেটা দেখছি কেউ কেউ খর্ব করার চেষ্টা করছে। আমার কী করা উচিত বা অনুচিত তা নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে। অথচ বিষয়টা এতটাই স্টুপিড যে আমি প্রচন্ড বিস্মিত ও স্তম্ভিত যে মানুষ এতটাও সঙ্কীর্ণ হতে পারে’!
স্তম্ভিত হলেও মীর জানিয়েছেন, ‘তিনি সব ধর্মের উৎসবে শুভেচ্ছা জানানোর রেওয়াজ আদৌ বন্ধ করবেন না। কারণ তিনি এটাও বিশ্বাস করেন, ওপরওলা সব মানুষকে নাক দিলেও ‘অন্যের সব ব্যাপারে যে নাক গলাতে নেই’ এটা বলে পাঠাননি, আর ফলে এই ধরনের কিছু লোক সব সময়েই থাকবে’।
সূত্র: বিবিসি
মন্তব্যসমূহ